সিলেট অফিস :: : সিলেট নগরীতে চাঁদার টাকা না পাওয়ায় ‘পুলিশি নির্যাতনে’ এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে।
নিহত যুবকরে নাম রায়হান উদ্দিন (৩৪)। তিনি আখালিয়া নেহারী পাড়ার গুলতেরা মঞ্জিলের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনাটি ঘটে রোববার ভোরে নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাই কালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে। ভোরে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা দাবি করা হয়েছিলো বলেও অভিযোগ তাদের।
জানা যায়, নিহত রায়হান উদ্দিন শাহজালাল ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক ডা. আবদুল গফ্ফারের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তার বাবা নেই। বাবার মৃত্যুর মাকে বিয়ে করেন চাচা হাবিবুল্লাহ। তবে স্ত্রী ও দুই মাস বয়সী এক মেয়েকে নিয়ে রায়হান থাকেন আলাদা বাসায়।
এদিকে, ‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রোববার বিকেলে নগরীর আখালিয়া এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। এসময় তারা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ বলেন, রোববার ভোর সাড়ে ৩টা পৌনে ৪টার দিকে একটি অপরিচিত নাম্বার (০১৭৮৩৫৬১১১১) থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হয়। ফোন ধরার পর কথা বলে রায়হান। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলথে থাকে ‘আমারে বাঁচাওরেবা…আমারে বাঁচাও।’ এরপর আমি তার অবস্থান জানতে চাইলে সে জানায়, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছে। এসময় ফাঁড়িতে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে বলে রায়হান।
হাবিবুল্লাহ বলেন, ফোন পেয়ে সাথে সাথেই আমি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যাই। তখন সেখানে অবস্থানরত সাদা পোষাকে থাকা এক পুলিশ সদস্য একজন বলেন, সে (রায়হান) ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন দেখা করা যাবে না। এরপর তিনি পাশ্ববর্তী কুদরতউল্লাহ মসজিদে নামাজ আদায় করে সকালে আবার পুলিশ ফাঁড়িতে যান।
হাবিবুল্লাহ বলেন, ফাঁড়িতে যাওয়ার পর একজন লোক আমাকে বলেন, আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথাছিলো। টাকা এনেছেন?’ কিছু টাকা এনেছি জানানোর পর তারা আমাকে বসিয়ে রাখেন। এরপর ১০টার দিকে বলেন, আপনার ছেলের শরীর খারাপ করেছিলো। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওসমানী হাসপাতাল গিয়ে দেখতে পারবেন। এ কথা শুনার পরপরই আমি (হাবিবুল্লাহ) ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশী নির্যাতন করে রায়হানকে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ তার।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, পরিবারের অভিযোগটি আমরাও শুনেছি। পুরো বিষয়টি উপ-কমিশনার (উত্তর)-এর নেতৃত্বে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আসলে কোন জায়গা থেকে কারা রায়হানকে উদ্ধার করেছে তাও তদন্তে বের হয়ে আসবে।
উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি থেকে রায়হানের পরিবারকে ফোন দেওয়া ও টাকা দাবি করার অভিযোগ পেয়ে আমরা তদন্তে নেমেছি। এই ঘটনার পেছনে পুলিশের কেউ দায়ী থাকলে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে মোবাইল নাম্বার থেকে রায়হানের চাচাকে ফোন দেওয়া হয়েছিলো এই নাম্বারটি কার জনতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টিও আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।