আজ ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আটচল্লিশতম বার্ষিকী। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। জাতি অফুরন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপন করছে মহান স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার দিন। হাসি-কান্না, আশা-হতাশা, স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতা আমাদের সৃষ্টি সুখের উল্লাস। প্রিয় স্বাধীনতা তুমি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার। ‘নিত্য তোমায় চিত্ত ভরিয়া স্মরণ করি’। আটচল্লিশ বছর আগে ১৯৭১ সালে এসেছিল অগ্নিঝরা মার্চ। দুর্ভেদ্য ঐক্য আর দুর্জয় সংকল্পে সৃষ্টি হয়েছিল গণজোয়ার। বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা গর্জনে উন্মাতাল মুজিবের বাংলাদেশ। সে চায় স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতার উদগাতা শেখ মুজিব, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার ঘোষণা ও দিক-নির্দেশনায় বাঙালি জাতি সম্পাদন করেছিল একাত্তরের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ। যা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তির বাসনায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। হামলার মুখে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা এবং বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এর আগে বঙ্গবন্ধু আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নে উজ্জীবিত করেন। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে এ দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফার প্রতি জানায় অকুণ্ঠ সমর্থন। শুরু হয় জনরায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের ষড়যন্ত্র। আসে একাত্তরের আগুনঝরা মার্চ। বাঙালির হাতে পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর না করার দুরভিসন্ধির প্রতিবাদে জেগে ওঠে বাংলাদেশ। দলমত নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু করে অসহযোগ আন্দোলন। সে আন্দোলন রূপ নেয় স্বাধিকার সংগ্রামে। জাতির মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নিজ কণ্ঠে ধারণ করে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু মুজিব রেসকোর্স ময়দানের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ডাক দেন স্বাধীনতার। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে স্বাধিকার আন্দোলন রূপ নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে। চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালি জাতিসত্তাকে নিশ্চিহ্ন করতে শুরু করে ভয়াবহ গণহত্যা। সেই ভয়াল রাতে শুধু ঢাকা শহরেই হত্যা করে অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে। সেই রাতে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবন থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাধীনতা ঘোষণা করেনÑ ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’। রাত ১২টার পর বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে এ ঘোষণা বেতারে শোনা যায়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণায় সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে আক্রান্ত বাঙালি জাতি। শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান বাহিনী। ৩০ লাখ প্রাণের আত্মাহুতি আর তিন লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে প্রিয় স্বাধীনতা। আমাদের সব আশা এখনো পূর্ণ হয়নি সত্যি। তবে অর্জন রয়েছে অনেক। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির অঙ্কে প্রাপ্তির যোগটাই বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে তরুণ প্রজন্ম। সেই তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত রাখবে, সাম্প্রদায়িকতার থাবা থেকে রক্ষা করবে। গড়বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী সমৃদ্ধ শান্তির বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভবনে ও প্রধান সড়কগুলোতে উড়ছে জাতীয় পতাকা। জাতি আজ গভীর কৃতজ্ঞতায় ও বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদকে। স্মরণ করছে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর নারীদের। আজ ভোরে রাজধানীতে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা করা হয়েছে। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানে পালন করা হচ্ছে দিবসটি। আজ ফুলে ফুলে ভরে উঠে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমত নির্বিশেষে হাজির হবে লাখো মানুষ। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন সাবেক দুই রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও এইচএম এরশাদ এবং জাতীয় নেতৃবৃন্দ।