ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর নিখোঁজ সাবমেরিন কেআরআই নাঙ্গালা ৪০২ এর আরোহীদের কেউ বেঁচে নেই বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে উদ্ধারকারী দল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এই শঙ্কা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি।শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিবিসিকে জন কিরবি জানান, সাগরের যে অংশে সাবমেরিনটি ডুবেছে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সেখানে তেল ভাসতে দেখা গেছে। তেলের ট্যাংকে ছিদ্রের ফলেই সেটি আর এগোতে পারেনি এবং আরোহীদের সবার সলিল সমাধি ঘটেছে।
জন কিরবি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু এবং কৌশলগত মিত্র। নিখোঁজ সাবমেরিনটি সম্পর্কে সাম্প্রতিক যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। সাবমেরিনটির নাবিক ও তাদের পরিবারের সদ্যদের প্রতি সবসময় আমাদের সমবেদনা ও প্রার্থনা থাকবে।এর আগে বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সোনার ট্র্যাকিং পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাগরের যে অংশে কেআরআই নাঙ্গালা ৪০২ ডুবেছে, সেটি গভীরতা ১৬৫ থেকে ৩৩০ ফুট। শুক্রবার ইন্দোনেশিয়া সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, সাবমেরিনটিতে যে কয়েকঘণ্টার অক্সিজেন অবশিষ্ট ছিল— সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে।ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের উপকূলের নিকটবর্তী সমুদ্রে মহড়া দেওয়ার সময় বুধবার সকালে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায় দেশটির নৌবাহিনীর সাবমেরিন কেআরআই নাঙ্গালা ৪০২। সে সময় সাবমেরিনটিতে ৫৩ জন আরোহী ছিলেন।শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আশমাদ রিয়াদ বিবিসিকে বলেছিলেন, সাবমেরিনটিতে শনিবার ভোর ৩ টা পর্যন্ত চলার মতো অক্সিজেন অবশিষ্ট আছে। এই সময়সীমার মধ্যে নাবিকদের উদ্ধার করা গেলে তাদের বাঁচানো সম্ভব হবে।
এরপর সাগরে ব্যাপক অনুসন্ধান তৎপরতা শুরু হয়। কমপক্ষে ৬টি যুদ্ধ জাহাজ, একটি হেলিকপ্টার ও ৪০০ লোক এ অনুসন্ধানে অংশ নেয়। এ কাজে ইন্দোনেশীয় সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করতে সেখানে সাহায্যকারী জাহাজ ও দল পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া।১৯৭০ সালে নির্মিত কেআরআই নাঙ্গালা ৪০২ সাবমেরিনটি জার্মানির তৈরি এবং ইন্দোনেশিয়ার মোট যে পাঁচটি সাবমেরিন রয়েছে এটি তার একটি।নিকট অতীতে বেশ কিছু সাবমেরিন দুর্ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, সে দেশে সাবমেরিন হারানোর ঘটনা এই প্রথম। তবে এ ধরনের ঘটনা নিকট অতীতে বেশ কয়েকটি ঘটেছে।রাশিয়ার নৌবাহিনীর কুর্স্ক নামে একটি সাবমেরিন ২০০০ সালে ব্যারেন্টস সি-তে ডুবে যায়, যাতে ১১ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। তদন্তে জানা যায় যে সাবমেরিনটির একটি টর্পেডো ফেটে গিয়েছিল এবং তা অন্য টর্পেডোগুলোতেও বিস্ফোরণ ঘটায়।বেশির ভাগ ক্রু-ই সঙ্গে সঙ্গেই মারা গিয়েছিল, তবে কয়েকজন সাবমেরিনের মধ্যে আরও কয়েকদিন বেঁচে ছিলেন। তবে পরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। ২০০৩ সালে চীনা নৌবাহিনীর এক মহড়ার সময় একটি সাবমেরিন দুর্ঘটনায় ৭০ জন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও ক্রু নিহত হন।এ ছাড়া ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনার একটি সামরিক সাবমেরিন ৪৪ জন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয়। এক বছর পর এর ধ্বংসস্তুপ খুঁজে পাওয়া যায়।