ব্রিটবাংলা : যুক্তরাজ্যের হাউজ অফ লর্ডস এ বৃহস্পতিবার ২৫ অক্টোবরে “বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য মৌলবাদী হুমকি এবং করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে বক্তাগণ জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে তাদের বিশ্লেষণ নতুনকরে নিরূপণ করার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইউরোপের নীতিনির্ধারকদের এটা সঠিকভাবে বোঝা উচিত যে, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মৌলবাদী চরমপন্থা এবং ধর্মান্দ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উত্থান কোন স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং এটা ইউরোপের জন্যও সমানভাবে বড়মাপের হুমকি। তাই বক্তারা বাংলাদেশে গোঁড়া ধর্মান্ধতা ভিত্তিক এবং সবধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার মূল উৎপাটনে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
ইউরোপে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংস্থা ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) এর পৃষ্ঠপোষক লর্ড পল বিউ এর আমন্ত্রণে এই সেমিনারের আয়োজন করে ইবিএফ। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে ব্রিটিশ সংসদের সদস্য এবং বাংলাদেশ বিষয়ে সর্বদলীয় সাংসদীয় কমিটির সহ-সভাপতি জিম ফিজপ্যাট্রিক এমপি, দ্য এশিয়ান এইজ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সৈয়দ বদরুল আহসান, জার্মান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট এর গবেষক ও ব্রাসেলস ভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া গণতান্ত্রিক ফোরাম এর পরিচালক ডঃ জিগফ্রিড উলফ, নির্মূল কমিটির এর সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর ডেমক্র্যাসি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবার্তা বনাজি, এবং লন্ডনস্থ কুইন ম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন ফ্রাম্পটন বক্তৃতা করেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইবিএফ সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ। সেমিনার এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনুষ্ঠিত হল, যখন চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, এবং অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আসন্ন নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়ে আসছে। এর আগেও জাতীয় নির্বাচন অনির্বাচিত নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীন না হলে নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিয়েছিল বিএনপি।
বক্তারা সেমিনারে বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আদর্শ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও একইসাথে সতর্ক থাকতে হবে যে, ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের বিরোধী শক্তিকেও তুচ্ছ করে দেখা যাবে না এবং অবহেলা করা যাবে না, বিশেষভাবে বাংলাদেশ যখন এই বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং দেশের সব মানুষ স্বাধীনভাবে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
ডঃ জিগফ্রিড উলফ বলেন, পশ্চিমের দেশগুলোর কোনভাবেই এমন দল এবং গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের ভূখন্ডকে তাদের স্বর্গরাজ্য বানাতে দেওয়া উচিত হবে না, যারা কোনভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দেয়। তিনি আরও বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরোক্ষভাবে, সরাসরি কিংবা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার নামে কিংবা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নামে সহিংস সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করছে তাদেরকেও জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে।
ঢাকা থেকে আগত লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং বিশেষভাবে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপরে নৃশংস নিপীড়ন প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি–জামাত চক্র বাংলাদেশকে একটি গোঁড়া ধর্মান্দ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। আর সেজন্য তারা লক্ষাধিক হিন্দু নারীপুরুষকে বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করেছে। সেসময় এসব নির্যাতনের বিখভ-প্রতিবাদে ভ্রূক্ষেপ না করে বিএনপি সরকার সুশীল সমাজের নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড সিন্ধি কংগ্রেস এর জেনারেল সেক্রেটারি লাখু লুহানা, হিউমেন ফার্স্ট এর পরিচালক অজন্ত দেব রায় এবং লেখক প্রিয়জিত দেবসরকার। সেমিনারে যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ইতালি, জার্মানি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অর্ধশতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী এবং ইউরোপীয় প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।