ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২০। কওমি ধারায় ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি। ইন্তেকাল করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। এরপর এক মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের আমিরের পদ শূন্য। নতুন আমির নির্বাচন করা হয়নি। কাউকে ভারপ্রাপ্ত আমিরও নিয়োগ দেয়া হয়নি। কাউন্সিল কবে হবে তাও হলফ করে বলতে পারছেন না কেউই।
যদিও আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পরপরই হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী জানিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে কাউন্সিল ডেকে নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে।
তিন যুগ ধরে কওমি অঙ্গনে ছিল আল্লামা আহমদ শফীর শাসন। হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এরমধ্যে ছাত্র আন্দোলনের মুখে হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধানের পদ ছেড়েছিলেন তিনি। মাদ্রাসাটি এখন পরিচালিত হচ্ছে একধরনের যৌথ নেতৃত্বে। কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্ববৃহৎ বোর্ড মাদারিসিলি আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এ ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাওলানা মাহমুদুল হাসান ভোটের মাধ্যমে এ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকে পরাজিত করেন তিনি। এ নির্বাচনেও প্রভাব বিস্তারের কিছু অভিযোগ রয়েছে।
গত এক মাস ধরে কওমি পাড়ায় বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের আমির হচ্ছেন কে? গত মাসে হাটহাজারীতে ‘নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের’ পর বিষয়টিকে স্পর্শকাতর বিবেচনা করা হচ্ছে। বেফাকের মহাপরিচালক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী এবং হেফাজত নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহর চাওয়া-পাওয়া অনেকটাই পূরণ হয়েছে। কিন্তু হেফাজতের বিষয়টি বেশ জটিল। আমির হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগীর নাম। আল্লামা আহমদ শফী বেঁচে থাকতেও তাকে হেফাজতে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনে করা হতো। যদিও আনাস মাদানীকে কেন্দ্র করে আল্লামা শফীর সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। তাছাড়া, সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নেয়ার বিরোধী ছিলেন তিনি। শাপলা চত্বরের ঘটনার পর কারাভোগও করেন। হাটহাজারীতে এরইমধ্যে তার প্রত্যাবর্তন হয়েছে। নিজের প্রভাবশালী অবস্থান ফিরে পেয়েছেন তিনি।
কিন্তু আনাস মাদানীর মতাদর্শের অংশটি যে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে হেফাজতের আমির হিসেবে দেখতে চান না তা একেবারেই পরিষ্কার। ভারপ্রাপ্ত আমির নিয়োগ নিয়েও এ গ্রুপের একধরনের সংকট রয়েছে। কারণ সাধারণত সিনিয়র সহ-সভাপতি থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। এক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর নাম। তারাও আনাস মাদানীর সমর্থকদের কাছে পছন্দের নন।
অন্যদিকে, বর্তমান কমিটির কিছু নেতার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থকদের মধ্যে। তারা মনে করেন, কিছু নেতা সুযোগ সুবিধা নিয়ে নেতৃত্বে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভারপ্রাপ্ত আমির বা আমির ছাড়া একটি সংগঠন কতদিন চলতে পারে? ধারণা করা যায়, পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে নিতে উভয়পক্ষই সময় নিচ্ছে।