নোবেলজয়ী অভিজিৎকে বৈঠকে ডাকলেন মোদী

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: এ বছর সস্ত্রীক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ন্যূনতম আয় প্রকল্প রচনা করায় এবং নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করায় বিজেপির মন্ত্রী ও নেতারা বেজায় ক্ষিপ্ত হয়ে নানা রকম মন্তব্য করেছেন। এর ফলে যে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে তা অনুমান করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিজিৎকে আগামী মঙ্গলবার তার বাসভবনে বৈঠকে ডেকেছেন। অবশ্য নোবেল প্রাপ্তির প্রায় চার ঘন্টা পর অভিজিৎকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মোদী। এই দেরি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। মোদীর সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠকের পাশাপাশি নীতি আয়োগের সঙ্গেও বৈঠক করবেন অভিজিৎ। সেখানে ভারতীয় অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবারই মোদী সরকারের মন্ত্রী পীযূষ গয়াল অভিজিৎকে ‘বামপন্থী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। পীযূষ বলেছেন, ভারতের মানুষ তার ভাবনা খারিজ করে দিয়েছে।

কংগ্রেসের ন্যায় প্রকল্পে দেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দরিদ্র পরিবারকে বছরে ৭২ হাজার রুপি করে দেয়ায় প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের প্রকল্প ‘ন্যায়’-এর অন্যতম রূপকার ছিলেন অভিজিৎ।

মন্ত্রীর কটাক্ষের উত্তরে অভিজিৎ বলেছেন, মানুষ ন্যূনতম আয়ের ভাবনা খারিজ করেছে, এমন যুক্তি শুনে তিনি কিছুটা হলেও হতাশ। তবে ভোটাররা তার কথায় কান দিয়েছিলেন সেটা শোনাও তৃপ্তিদায়ক। অভিজিৎ বলেন, অর্থনীতি নিয়ে ভাবনার ক্ষেত্রে আমার কোনও পক্ষপাত নেই। বিজেপি সরকার যদি আমার কাছে জানতে চাইত যে, একটি নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ জনসংখ্যার কতটা, আমি কি তাদের সত্যিটা কী তা বলতাম না? একই সঙ্গে অভিজিৎ জানিয়েছেন, অতীতে মনমোহন সিংহ সরকারেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। কংগ্রেস আমলেই জেএনইউ-এ উপাচার্যকে ঘেরাও করার দায়ে তাকে ১০ দিন কাটাতে হয়েছিল তিহার জেলে। অভিজিৎ শনিবার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়ে তার নোবেল পাওয়াকে নিছক ‘বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়া’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও তিনি একই সময়ে জেএনইউ-এ পড়েছেন। ১৯৮৩ সালে অভিজিৎ যখন এমএ পাস করেন, তখন এমফিল করছেন নির্মলা। পরে এক সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ বলেছেন, নির্মলা আমার বন্ধু ছিলেন। সুন্দর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমতী নির্মলার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আমার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল না। অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে ‘বন্ধু’ নির্মলা কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের যে দাওয়াই দিয়েছেন, তাকে খারিজ করে দিয়েছেন অভিজিৎ। তার অভিযোগ, সরকার কর্পোরেট জগতের ‘প্রবল চাপ’-এর সামনে মাথা নত করেছে। অভিজিতের মতে, এই মুহূর্তে সমস্যা হল বাজারে চাহিদার অভাব। সে জন্য আমজনতার হাতে নগদ টাকা তুলে দেয়া দরকার। তিনি বলেন, নির্মলা বরং প্রথমে কর্পোরেট কর বাড়িয়েই স্মার্ট পদক্ষেপ করেছিলেন। কর্পোরেট কর কমানোয় যে রাজস্ব ক্ষতি হবে, তা একশো দিনের কাজ প্রকল্পে খরচের দ্বিগুণ। এখন দরকার একশো দিনের কাজে খরচ বাড়ানো, চাষিদের বেশি সহায়ক মূল্য দেয়া। তা হলে বাজারে চাহিদা বাড়ত। অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে মোদী সরকার যে ভুল নীতি নিচ্ছে সেকথা উল্লেখ করে অভিজিতের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি কমেছে ঠিকই, কিন্তু কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্য বাড়েনি। পাশাপাশি কৃষিপণ্য রফতানি কমেছে। চাষিরা মার খেয়েছেন। তাদের হাতে খরচ করার মতো টাকা নেই। এর আগে নোট বাতিলের ফলেও নগদের অভাবে কেনাকাটা কমেছিল।

Advertisement