‘নয়া ভাই রাজাকার’ : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: আমৃত্যু আওয়ামী লীগ করা নেতা, সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি, পাথরঘাটা থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম মজিবুল হক ‘নয়া ভাই’কে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নেমে আজ বেলা ১১টায় প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন। হরতাল পালন করেছে শহরের ব্যবসায়ীরা। এতে তাদের সঙ্গে অংশ নেন পাথরঘাটা আইনজীবী সমিতি, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকও হাজারো স্থানীয়রা।
এর আগে সকাল ১০টায় পাথরঘাটা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে তারা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পদত্যাগ দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন মজিবুল হক নয়া ভাই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকেছেন মজিবুল হক। মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে শুরু করে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটা সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নয়া ভাই। পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা ৪০ বছর সভাপতি ছিলেন তিনি, ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। ১৯৮৬ সালে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলে পাথরঘাটা-বামনা এলাকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সংবাদ সম্মেলনে পরে তারা পাথরঘাটা শেখ রাসেল স্কয়ারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

সদ্য প্রকাশিত তালিকায় পাথরঘাটা উপজেলার ১২ জনের নাম আছে। দুজন আওয়ামী লীগ নেতা, একজন আলহাজ মজিবুল হক। অপরজন দলিললেখক আমজাদ হোসেন, লালমুক্তি বার্তায় তালিকাবদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আমির হামজা (রুস্তুম খান) ও খলিলুর হমান মানিক। সকলেই পরোলোকগত। অন্যদের বিষয়ে পরিবারের কেউ আপত্তি করেননি।

মানববন্ধনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর মেয়র মল্লিক মো. আইউব বলেন, মজিবুল হক নয়া ভাই একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তার নাম আজ রাজাকারের তালিকায়। এতে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে অপমান করা হয়েছে। তিনি যদি রাজাকার হন তাহলে আমরা সবাই রাজাকার, পাথরঘাটার সবাই রাজাকার। আমি এ তালিকার প্রতিবাদ জানাই। এ সময় উপস্থিত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও হাজারো মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করেন।

মানববন্ধনে মজিবুল হক নয়া ভাইয়ের মেজ ছেলে রেজাউল হক সাহিন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী আমার বাবা মজিবুল হকের নাম সদ্যঃপ্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় আসায় আমি ক্ষুব্ধ। মানববন্ধন শেষে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।

পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউন্সিলের সভাপতি আ. মন্নান হাওলাদার জানান, মজিবুল হক সাহেব তার জীবন-যৌবন সব আওয়ামী লীগকে দান করে গেছেন।

মজিবুল হকের স্ত্রী নুরহাজান বেগম বলেন, আমার স্বামী ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। সংগ্রাম পরিষদ পরিচালনা করেছেন। যুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িতে আশ্রায় নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষদের ভরণ-পোষণ দিয়েছেন। আজ সেই মানুষটা কি করে রাজাকার হয়?

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের নাম রাজাকার তালিকায় ওঠায় পাথরঘাটা পৌর শহরের সবাই আজ বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্বতঃস্ফুর্ত হরতাল পালন করে। এ সময় শহরের সব দোকান-পাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ আজ (মঙ্গলবার) বিকাল ৪টায় খাসকাচারী মাঠে জনসভার আয়োজন করেছে। সভায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন জানান।

Advertisement