মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র কুয়েতের বিরোধী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছে দেশটির সরকার। সোমবার (৮ নভেম্বর) দেশটির ক্ষমতাসীন আমিরের কাছে কুয়েত সরকার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে বলে স্থানীয় দৈনিক আল কাবাস এবং আল রাই নিশ্চিত করেছে।প্রতিবেদনগুলোতে জানানো হয়, দেশটির নির্বাচিত সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ইস্যুতে বিরোধী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা চলছে। সেই অচলাবস্থার অবসানে সহায়তায় কুয়েত সরকার দেশটির আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে।
পার্লামেন্টে বিরোধী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সৃষ্ট বিরোধের জেরে চলতি বছরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বিতীয়বারের মতো পদত্যাগ করল। সরকারের এই পদক্ষেপের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা এখন দেশটির আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর রয়েছে। তিনি মন্ত্রিসভার এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন কি-না তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি।চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কুয়েতের তৎকালীন সরকারের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ নেতৃত্বাধীন সরকার মার্চে গঠিত হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দেশটির বেশ কয়েকজন বিরোধী আইনপ্রণেতাদের মহামারি কোভিড-১৯, দুর্নীতি মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের ওপর জোরারোপ করেছেন।যার প্রেক্ষিতে সংসদে আইন প্রণয়নের কাজ থমকে যায়। এছাড়া গত বছর করোনা ভাইরাস মহামারি এবং তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় দেশটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অর্থনীতির চাকা সচল করার লক্ষ্যে সংসদে বাজেট পাসেও বাধার সম্মুখীন হয় সরকার।
কুয়েতে মন্ত্রিসভার সঙ্গে সংসদের অচলাবস্থা কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। যা বিভিন্ন সময়ে দেশটির সরকারের রদবদল এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে সমাধান করা হলেও বিনিয়োগ ও সংস্কার কাজ ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হয়।বিশ্লেষকদের মতে, দেশটির সংসদের বিরোধী আইনপ্রণেতারা ২০১৯ সালের শেষের দিকে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহকে দুর্নীতি, মহামারি কোভিড-১৯, অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। একই সঙ্গে চলতি বছরের মার্চ মাসে সংসদে পাসকৃত একটি প্রস্তাবের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।বিতর্কিত ওই প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীকে যে কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ আগামী বছরের শেষের দিক পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়। শেখ সাবাহকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের সাধারণ ক্ষমার দাবি জানানো বিরোধীদের সঙ্গে সংসদের এই অচলাবস্থা কাটাতে সম্প্রতি দেশটির সরকার আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে।
রবিবার কুয়েতের মন্ত্রিসভায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের পরিকল্পিত সাধারণ ক্ষমার খসড়া ডিক্রি অনুমোদন দেওয়া হয়। কুয়েতের সরকার বলছে, বিরোধী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার কারণে গত কয়েক মাস যাবত আইন প্রণয়নের কাজ আটকে রয়েছে। এই সংকট নিরসনে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের সাধারণ ক্ষমার খসড়া ডিক্রি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।উল্লেখ্য, কুয়েতে রাজনৈতিক দলের অনুমতি না থাকলেও দেশটির সংসদের ক্ষমতা অন্যান্য উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি। দেশটির সংসদের আইন পাস ও আটকে দেওয়ার ক্ষমতা, মন্ত্রিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ডাক দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর, রয়টার্স