পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা সমাধান রাজনৈতিকভাবেই সম্ভব

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান একমাত্র রাজনৈতিকভাবেই সম্ভব। এক্ষেত্রে বল প্রয়োগ বা অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন বিপরীত ফল বয়ে আনবে। তাই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বে সম্পাদিত পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনরা এ মতামত তুলে ধরেন।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২ বছর উপলক্ষে এএলআরডি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন আয়োজিত ‘পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন বনাম পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক ওই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।

আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, পার্বত্য কমিশনের উপদেষ্টা ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপমা দেওয়ান, এএলআরডি’র শামসুল হুদা প্রমূখ।

পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, অনেক চেষ্টার পারও এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা যায়নি। এক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাবে রয়েছে। অথচ এই সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধানের বিকল্প নেই। তাই প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে সরকারকে সহযোগিতার জন্য পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

বল বা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ চেষ্টা চলছে দাবি করে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বৈরিতা দেখিয়েছে, মিথ্যাচার করছে। এখনো নানাভাবে বল প্রয়োগ করা হচ্ছে। যারা এই চুক্তির জন্য শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের কাছ থেকে এটা কাম্য নয়। সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, দীর্ঘ ২২ বছরেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ সত্ত্বেও তাদেরকে ভূমির অধিকার থেকে দূরে রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সাম্য ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার উদ্যোগী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্র ওই অঞ্চলের মানুষের অধিকার লংঘন করেছে। শতাংশের হিসাব নয়, আদিবাসীদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করলেই শান্তিচুক্তির বেশীভাগই বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি দাবি করেন।

রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, উন্নয়নের নামে পার্বত্য অঞ্চলের স্বকীয়তা নষ্ট করা হচ্ছে। ওই অঞ্চলের ভাষা-সংস্কৃতি হুমকির মুখে। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, আদিবাসীরা সব সময়ই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বঞ্চনার শিকার। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তাদের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। এরপর শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য জনগোষ্ঠির মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। ফলে সেখানে দল ও উপদল এবং সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তাই চুক্তিটি বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বর্তমান সরকার সেই উদ্যোগ নিবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

Advertisement