যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ভারত ফেরত ছয়জনসহ ৭ জন করোনা রোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার আগে অবশ্য তারা হাসপাতাল থেকে করোনামুক্ত হওয়ার ছাড়পত্র পান। পরে আদালত জামিন আবেদন মঞ্জুর করলে বাড়িতে ফিরেছেন তারা। তাদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় শনিবার (৮ মে) পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার পর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।এ মামলায় অভিযুক্ত আরো তিনজন চিকিৎসাধীন থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।
গ্রেপ্তার সাতজন হলেন- ভারতফেরত যশোর শহরের পশ্চিম বারান্দিপাড়ার বিশ্বনাথ দত্তের স্ত্রী মনিমালা দত্ত (৪৯), সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপপাড়া গ্রামের মিলন হোসেন (৩২), রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের নাসিমা আক্তার (৫০), খুলনা সদর উপজেলার বিবেকানন্দ (৫২), খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ডামরাইল গ্রামের আমিরুল সানা (৫২), একই জেলার রূপসা উপজেলার সোহেল সরদার (১৭) ও স্থানীয় রোগী যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (১৯)। সোমবার সকালে এ সাতজনকে ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল।
এ ছাড়া অভিযুক্ত ভারত ফেরত সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার শেফালি রানী সরদার (৪০), স্থানীয় রোগী যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের একরামুল কবীরের স্ত্রী রুমা (৩০) ও যশোর শহরের ওয়াপদা গ্যারেজ এলাকার ভদ্র বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস (৩৭) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর সোমবার তাদের মধ্য থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হবে।পুলিশ তাদেরকে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে শুনানি শেষে বিচারক মাহাদী হাসান জামিন মঞ্জুর করেন।যশোর পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এপ্রিলের ১৮ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে ভারত ফেরত সাত জন ও স্থানীয় তিন জন করোনা পজিটিভ রোগী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তারা ২৩ তারিখ সকাল ও ২৪ এপ্রিল দুপুরের মধ্যে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে জানায়। পুলিশ এরপর পালিয়ে যাওয়া রোগীদের শনাক্ত এবং তাদের স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে ফের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ ২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের ২৫(২) ধারায় আদালতে নন এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিল করে। রোববার আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে সাত জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। এছাড়া পরোয়ানাভুক্ত অপর তিন জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে একজন ভারত থেকে আসা এবং দুই জন স্থানীয় পর্যায়ে করোনা সংক্রমিত। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানায় পুলিশ।হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল সময়ের মধ্যে করোনা সংক্রমিত সাত জন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে দেশে আসে। এসব করোনা রোগীর মধ্যে ১৮ এপ্রিল একজন, ২৩ এপ্রিল পাঁচ জন ও ২৪ এপ্রিল একজন আসেন। জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয় তাদের। ওয়ার্ডে না গিয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। ভারতে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন শনাক্তের পর এই পালানোর বিষয়টি আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এছাড়া, সেখানে স্থানীয় পর্যায়ে ভর্তি তিন জন করোনা সংক্রমিত রোগীও হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর সোমবার তাদের মধ্য থেকে সাত জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, গত ১৮ থেকে ২৪ পর্যন্ত এপ্রিল পর্যন্ত বেনাপোল সীমান্তে করোনা শনাক্ত হয়ে ৬ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালে আসেন। তাদেরকে জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হলে তারা সেখানে না গিয়ে পালিয়ে যান। ভারত ফেরত করোনা শনাক্তদের পালিয়ে যাওয়ার খবর আলোচনা সৃষ্টি করে।এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন পালিয়ে যাওয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২৬ এপ্রিল রাতের মধ্যে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসে হাসপাতালে।যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমে বাধা প্রদানের অভিযোগে মামলাটি দায়ের হয়েছে। এ মামলায় তিনমাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।