প্যারিসে নির্মাতা প্রকাশ রায়ের ‘ইলুসিয়ন দু’ন প্রমনাদ’ এর প্রদর্শনী

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ফ্রান্স প্রবাসী  নির্মাতা প্রকাশ রায়ের ‘ইলুসিয়ন দু’ন প্রমনাদ’ নামে  একটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় প্যারিসের একটি হলে অনুষ্ঠিত এই তথ্যচিত্রটি মূলত বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক ড. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কে নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
৫০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীতে বাঙালি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক ফরাসিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে বর্তমান সময় পর্যন্ত ড. মুখোপাধ্যায়ের জীবনের নানাদিক। বিশেষ করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তার উদ্যমী ও দৃঢ় মনোভাবের কারণে সফলতার শিখরে  আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
ড.  পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও ১০ বছর বয়সে পণ্ডীচারি চলে যান। সেখানে ২০ বছর ছিলেন এবং বুকের মধ্যে বাংলাকে ধারণ করেছিলেন। বাংলা চর্চা সেই তখন থেকে। বিদেশি ভাষার ব্যবহার বাংলার মাধুর্যতাকে যাতে নষ্ট না করে সেদিকে তার নজর ছিল প্রবল। বাংলার প্রতি তার এই ভালবাসা আরো প্রগাঢ় হল পণ্ডীচারি গিয়ে।
ড.  পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৯৬৬ সালে ভারত থেকে ফ্রান্স আসেন। ফ্রান্সে পড়াশুনাসহ গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়ে গবেষণা কাজে নিজেকে মগ্ন রাখেন।  বাংলা ভাষার মতো ফরাসি ও ইংরেজিতে তার ব্যাপক দক্ষতা মৌলিক রচনার পাশাপাশি একজন শ্রেষ্ঠ বিদেশি গ্রন্থের অনুবাদক হিসাবে ব্যাপক খ্যাতি এনে দিয়েছে। তিনি প্রায় ষাটটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের অনুবাদ করেন। তাছাড়া কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের একশ আটটি কবিতা ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন এবং একই গ্রন্থে তা প্রকাশ হয়।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ফরাসি জনপ্রিয় ‘লু মণ্ড’ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক কবিতা লিখেন এবং মুক্তিযুদ্ধের উৎসাহ ব্যঞ্জক রচিত অনেক  বাংলা কবিতার অনুবাদ করেন যা ফরাসি বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য পাতা ও সংকলনে প্রকাশ হয়।
ড. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘মৈত্রী সম্মাননা’, ফরাসি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘নাইট’ উপাধিসহ অনেক সম্মাননা লাভ করেন। প্রদর্শনী শুরুর অনেক আগেই ড.  পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়  হুইলচেয়ারে করে হলে প্রবেশ করেন দর্শকেরসারিতে হুইলচেয়ারে বসে ৫০ মিনিটের এই প্রদর্শনী দেখেন। প্রদর্শনী শেষে ‘মুক্তকথা টুয়েন্টি ফোর ডট কম’কে একান্তে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন- তিনি বাংলা ভাষা সংস্কৃতি প্রচার প্রসার ও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
ড.  পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়  সাত বছর বয়সে টাইপয়েড আক্রান্ত হলে তার পা দুটো অনেকটা অচল হয়ে যায়। তবুও প্রবল ইচ্ছা শক্তি, মানসিক দৃঢ়তা  ও অবিরাম প্রচেষ্টা তাকে সফলতার শিখরে নিয়ে এসেছে।
নির্মাতা প্রকাশ রায় তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি যে কাজগুলো করে যাচ্ছেন তা সামাজিক সাংস্কৃতিক ও দেশের দায়বদ্ধতা থেকে করে যাচ্ছেন। প্রদর্শনীতে ড.  পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়সহ তথ্যচিত্রের কলাকুশলীরা উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement