:: ব্যারিষ্টার আবুল কালাম চৌধুরী ::
আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম বিয়ানীবাজারে একজন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যাক্তির নাম আকবর হোসেন। তিনি বিয়ানীবাজার নয়াগ্রামের মৃত ছয়ফুল ইসলামের বাড়ীতে থাকেন। তার দেশের বাড়ি টাঙ্গাইলে। সম্প্রতি তিনি টাঙ্গাইলে গিয়েছিলেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, টাঙ্গাইল থেকে আসার পথে কোথাও তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। মটর সাইকেলে তার সাথে আরো দুজন ছিলেন তাদেরও খবর নেয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন শুধু বিয়ানীবাজার নয় বিশ্বের কোথাও না কোথাও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আমার লেখার মূল বিষয় কিন্ত আক্রান্ত হওয়ার খবর পরিবেশন নয়। এই আক্রান্ত হবার খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ধরণ এবং খবর শুনে অতিউৎসাহী মানুষের অতিরঞ্জিত প্রতিক্রিয়া নিয়ে।
করোনা ভাইরাস একটি রোগ আর এই রোগ যে কারো হতে পারে। ব্রিটেনের রাজপুত্ৰ আর প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কেউই এই রোগ থেকে রেহাই পাননি। এখন পর্যন্ত বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ লাখের মতো আর সর্ব মোট মৃত্যু ২০০ হাজারের মতো। ব্রিটেনের করোনা রোগ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে এবং যে কেউ সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এখনো এই রোগের কোন ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে এ পর্যন্ত রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৮০০ হাজারের মতো মানুষ। তাই আশার বিষয় হলো এখন পর্যন্ত মৃতের চাইতে আরোগ্যের সংখ্যাই বেশি। ডাক্তারদের পরামর্শ হলো এই রোগ থেকে কাটিয়ে উঠতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসিক শক্তি। অর্থাৎ মরার আগে না মরা। রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, আকবর হোসেন আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে তার বাড়িতে ডাক্তার, কবিরাজ, রাজনীতিবিদ সমাজকর্মী সবাই ভিড় করেছেন। গ্রিলের মধ্যে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন আকবর হোসেন। তার মুখে মাস্ক লাগানো, চোখের দিকে থাকালে বুঝা যায় প্রচন্ড ভয়ের চাপ। হয়তো উৎসুক জনতার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। কিছু কিছু ছবি দেখলে মনে হয় ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে তোলা। আর এই খবরকে চমকপ্রদ করতে ফেসবুকে আকবরের ছবির সাথে জুড়ে দেয়া হচ্ছে বিশেষ বিশেষ বিশেষণ। আর সেসকল স্ট্যাটাসে যে কমেন্টগুলো হচ্ছে, যেমন একে গ্রেফতার করা হউক, জেলে ঢুকানো হোক, গুলি করে মারা হোক। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে করোনা রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আকবর আজ কাঠগড়ায়। এযেন এক আজন্ম মহাপাপ। একবার চিন্তা করে দেখুন আকবরের মানসিক অবস্থা। একদিকে বেচারা করোনা রোগে আক্রান্ত আর অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্রচার-প্রচারণা এবং মানসিক অত্যাচার তাকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করবে।
এই নেগেটিভ প্রচারণার জন্য আমি নির্ধিদ্বায় বলতে পারি আকবর যাদের সংস্পর্শে এসেছিলো তারা সামনে আসবে না। এমনকি কেউ আক্রান্ত হলেও ভয়ে প্রকাশ করবে না। কিছুদিন আগে দেখেছি করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে একব্যক্তি মারা গেলে তার আত্মীয় স্বজন করোনার কথা প্রকাশ না করে লুকিয়ে জানাজা পড়েছে। সখিপুরের ঘটনা নিশ্চয় আপনাদের এখনো মনে আছে। করোনা সন্দেহে মাকে মধ্যরাতে সন্তানরা জঙ্গলে ফেলে চলে যায়। যদিও পরে জানা যায় ঐ মায়ের করোনা ছিলোনা। এরকম হাজারো ঘটনা প্রতিদিন আমরা দেখছি। আর এই ঘটনাগুলো ঘটার প্রধান কারণ নেগেটিভ প্রচারণা। তাই সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ, দয়া করে করোনাকে প্রচার করুন, করোনা আক্রান্তকে না। মরার আগে মানুষকে মারা থেকে বিরত থাকুন।
সবাই ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
লেখক:
ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
কন্ট্রিবিউটর, ব্রিট বাংলা২৪ এবং প্রিন্সিপাল সলিসিটার, কেসি সলিসিটর্স, লন্ডন।