১২ ডিসেম্বর লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত ব্যাতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, স্পীকার আহবাব হোসেন সহ টাওয়ার হ্যামলেটস ও নিউহ্যাম কাউন্সিলের কাউন্সিল বৃন্দের অনেকে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানু্ষ। মুক্তিযুদ্ধের কন্ঠ সৈনিক মাহামুদুর রহমান বেনু ও হিমাংশু গোস্বামী থেকে শুরু করে ব্রিটেনে জন্ম নেয়া বাংলাদেশী শিশুদের অংশগ্রহণে, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কবিতা,গান, নাচ ও নাটক দিয়ে সাজানো ছিল দীর্ঘ ৪ ঘন্টা ব্যাপী অনুষ্ঠান মালা।
বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক নৃশংসতা ও বৈচিত্র্যময় ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রীতি বিনষ্টের ধারাবাহিক অপচেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান ও একাত্মতা জানাতে, বিলেতে বসবাসরত, সঙ্গীতশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পী, নাট্যশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, টিভি নির্মাতা, সাংবাদিক, লেখক-সহ সকল সাংস্কৃতিক, নান্দনিক ও সৃজনশীল শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের এক যৌথ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের উদ্যোগ এই সম্প্রিতী কনসার্ট ইউকে।আয়োজকদের পক্ষে উর্মিন্মাজহার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ অর্জন করেছে, সেই দেশ কখনো সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। সেই বার্তাটা আমরা দিতে চাই। হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা অটুট রাখতে আমরা হাতে হাত ধরে নানা পেশার, নানা ধর্মের,নানা মতের মানু্ষ, এক সাথে সেই আওয়াজ টা তুলতে চাই, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতর দেশ।ব্রিটেনের প্রায় শতাধিক শিল্পী কলাকুশলীর অংশগ্রনে প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে লন্ডন সহ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে এসে সংহতি প্রকাশ করেছেন অনেকে। হাইকমিশনার তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কখনো বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হতে দেবেনা। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেই লালন করে, ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, নানাবিধ চাপ থাকার পরে ও ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে আসেন নি।উর্মি মাজহারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষজন এসে সংহতি প্রকাশ করেন।
সাংগঠনিক ভাবে যোগ দিয়েছিলেন, একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন,ব একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, যুক্তরাজ্য , উদিচি শিল্পী গোষ্ঠী যুক্তরাজ্য, সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস, সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য, গৌরী চৌধুরী’স সুরালয় , সপ্তসুর, রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলমুনিয়াই ইউকে, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ইউকে, বিজয় ফল, বাংলাদেশ টিচার্স এসোসিয়েশন ইউকে, হাসন মিউজিকাল গ্রুপ ইউকে। প্রশান্ত পুরকায়স্থ বিইএম, যিনি আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেন,
সম্প্রীতি কনসার্ট২১ উত্তর এই প্রথম সকালে সম্প্রীতির স্বপ্ন দ্রষ্টা উর্মী মাযহার, নিবেদিত প্রাণ ও কলাকৌশলী জয়দ্বীপ রায়, মকবুল চৌধুরী, নজরুল ইসলাম ওকিব, মুরাদ খান, মুনীরা পারভীন, হিমাংশু গোস্বামী, গৌরী চৌধুরী, জুয়েল রাজ, গোপাল দাশ, সঞ্জয় দে, শাহাব আহমদ বাচ্চু, সন্মিলিত সুজন সাংস্কৃতিক কর্মী, সদস্য, অতিথিবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। অসাধারণ শ্রম, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে সবাই মিলে একটি মানব কল্যাণমূলক যুগোপযোগী মহামিলন ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। এ বন্ধন সুদৃঢ় হোক। সম্প্রীতির এই মহতী উদ্যোগ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার জাগরণ ও সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস সতত বহমান, চলমান ও অনির্বাণ থাকুক, এটাই একান্ত কাম্য।
সংস্কৃতিকর্মী ও এক্টিভিস্ট অজন্তা দেব রায়, বলেন,অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা যারা করেছেন এবং সেটার সফল বাস্তবায়নে যারা যারা কাজ করেছেন সেই সকল গুণী শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সংগঠন, সমাজকর্মী, সাংবাদিক সহ দর্শক হিসেবে অংশগ্রহণকারী সকল মানবিক মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। সবার প্রতি অনেক ভালোবাসা রইলো। সম্প্রীতির জয় হোক।মিসবাহ উদ্দিন নামে একজন বলেন,বিলেতে আর একটি ইতিহাস স্থাপিত হলো। নিঃসন্দেহে,এ বিরল এবং সময়োপযুগী উদ্যোগ টি অসাম্প্রদায়িক চেতনার জাগরণে সকলকে উদ্বুদ্ধ করবে। চেতনায় বহমান থাকুক, প্রাত্যাহিক জীবন চলায়।সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো।সম্মিলিত শিল্পী কলাকুশলী, উপস্থিতি দর্শকের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ব্যাতিক্রমী আয়োজন ছিল কবি সাংবাদিক অপূর্ব শর্মা প্রণীত স্বদেশ আমার সাম্যের ও গাহি সাম্যের গান শিরোনামে আবৃত্তি পর্ব ও জুয়েল রাজ প্রণীত ও সুদীপ চক্রবর্তীর নাট্য প্রয়োগে নাটক মানুষের জয় হোক দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা লাভ করে।