ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: আরব দেশগুলোর শপিংমলগুলোতে এক ভিন্ন চিত্র। যেসব থরে থরে সাজানো থাকতো ফ্রান্সের নানা পণ্য, তা এখন ফাঁকা। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে করা দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মত প্রকাশের স্বাধীনতার অংশ হিসেবে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন। বলেছেন, ইসলামী উগ্রপন্থা থেকে তিনি দেশকে সুরক্ষিত করবেন। তার এমন মন্তব্যে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান তো তার মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলছে উত্তেজনা।
অন্যদিকে আরব অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশ ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। ফলে রাতারাতি আরবের বিভিন্ন দেশের শপিংমল থেকে হাওয়া হয়ে গেছে ফরাসি পণ্য।
অনলাইন বিবিসি বলেছে- কুয়েত, জর্ডান ও কাতারের শপিংমল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ফরাসি পণ্য। বিক্ষোভ হয়েছে লিবিয়া, সিরিয়া ও গাজা উপত্যকায়। কয়েকদিন আগে মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়ার কারণে ইতিহাসের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটির শিরñেদ করে চেচেন এক যুবক। এর নিন্দা জানাতে গিয়ে সন্ত্রাসের জন্য ইসলামপন্থি জঙ্গীদের দায়ী করেন ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি বলেন, শিক্ষক স্যামুুয়েল প্যাটিকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ ইসলামপন্থিরা আমাদের ভবিষ্যতকে নিয়ে নিতে চায়। তাই ফ্রান্সে ব্যঙ্গচিত্র পরিত্যাগ করা হবে না।
উল্লেখ্য, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর কোনো ছবি আঁকা মুসলিমদের কাছে চরম অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য। ইসলামিক রীতিতে মহানবী (স.) ও আল্লাহর ছবি আঁকা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু ফ্রান্সের জাতীয় পরিচয়ের মূলে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। তাই তাদের বক্তব্য, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের অনুভূতিকে রক্ষা করতে গিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতাক খর্ব করবে না ফ্রান্স। এতে তাদের ঐক্য বিনষ্ট হয়। রোববার ফরাসি মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি বলেন, আমরা কখনোই (ব্যঙ্গচিত্র) পরিত্যাগ করবো না।
এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের কড়া সমালোচনা করেছেন তুরস্ক ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা। তাদের অভিযোগ, ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে সম্মান দেখাচ্ছেন না ম্যাক্রন। এর মাধ্যমে তারা ফ্রান্সে বসবাসকারী কয়েক লাখ মুসলিমকে একপেশে করে ফেলছেন। রোববার দ্বিতীয়বারের মতো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ইসলাম ইস্যুতে দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এর একদিন আগেও তিনি একই রকম মন্তব্য করেন। জবাবে তুরস্কে নিয়োজিত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে দেশে তলব করে নেন ইমানুয়েল ম্যাক্রন। এরপর থেকে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, বিবৃতি।
ওদিকে রোববার জর্ডান, কাতার ও কুয়েতের শপিংমলগুলোতে যেখানে ফরাসি পণ্য দিয়ে সুন্দর করে সাজানো থাকতো, তা দেখা গেছে খা খা করছে। চুলের প্রসাধনী এবং অন্য সব রকম প্রসাধনী উদাহরণ হিসেবে দেখা গেছে, তাক থেকে উধাও হয়ে গেছে। ফরাসি পণ্য অনেক বেশি আমদানি করে কুয়েত। সেখান থেকে এবার ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। সেখানকার ইউনিয়ন অব কনজুমার কো-অপারেটিভ সোসাইটি বলেছে, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স,)কে নিয়ে বার বার অবমাননা করার প্রতিবাদে তারা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু এর জবাব দিয়েছে ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, পণ্য বর্জনের বিষয়টি তারা জানতে পেরেছে। পণ্য বর্জনের এই ডাক ভিত্তিহীন। অবিলম্বে এই পণ্য বর্জন বন্ধ করা হবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যেকোনো রকম আক্রমণ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, এসব ব্যবস্থা নিচ্ছে উগ্রপন্থি একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
অন্যদিকে সৌদি আরব সহ আরবের অন্য দেশগুলোতে ফরাসি পণ্য বর্জনের একই রকম ডাক দেয়া হয়েছে অনলাইনে। অন্যদিকে লিবিয়া, গাজা উপত্যকা এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।