ফাঁসিয়েছেন ইউপি এবং আত্মহত্যার চেষ্টা খাদ্য সহায়তা চাওয়া ফরিদের

:: হিমিকা আযাদ ::

এ কোন বিড়ম্বনার নাম ৩৩৩। যা মানুষের পরম সহায়ক হতে পারতো কোভিড আক্রান্ত এই দরিদ্র জনগোষ্ঠির । উদ্যোগটা ছিল প্রশংসনীয় বিপত্তি ঘটে তখনি যখন এর পরিচালনায় থাকে ত্রুটি । বলছি ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে খাদ্য যোগানের খবরটি ।চারতলা বাড়ীর মালিক নন নারায়নগন্জের ফতুল্লার ফরিদ উদ্দীন । বাবার রেখে যাওয়া একটি বাড়ীর তৃতীয় তলার পাশের ছাদে টিনসেডের দুটি ছোট্ট কামরায় একমাত্র প্রচিবন্ধী ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। কোরোনা পরিস্থিতে তার কাজ বন্ধ থাকায় তিনি কাজ নেন আরেক কারখানায়। চোখের সমস্যার কারণে সে চাকরীটিও করতে পারেননি তিনি। উপায় অন্তর না দেখে ৩৩৩ নাম্বারে ফোন দেন খাবারের জন্য। কিন্তু কিছু না জেনেই শুধু চারতলা বাড়ী আর গেন্জী কারখানা আছে এমন খবরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা কারাদন্ডের ভয় দেখিয়ে ১০০ পরিবারকে খাবার বিতরণের আদেশ দেন ।শাস্তির ভয়ে পয়ষট্টি হাজার টাকা ঋণ করতে হয়েছে এই ভূক্তভোগী পরিবারকে । দুবার স্ট্রোক হবার কারণে তিনি ঠিকমতো গুছিয়ে কথাও বলতে পারেন না এমনটাই বলছেন প্রতিবেশীরা। আর এই ঋণের দায় ভার বহন করতে না পেরে তিনি আত্নহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছেন । এমন ই প্রশাসনিক ব্যবস্থা চলছে ।

রবিবার (২৩ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে ৩৩৩ জাতীয় হটলাইনে কল দিয়ে খাদ্য সহায়তা চাওয়া ফরিদ আহমেদ চারতলা বাড়ির মালিক একা নন। বাড়িটির মালিক ছয় ভাই ও এক বোন। ফরিদ আহমেদ বাড়ির তিনটি রুমের মালিক। যে কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাকে আজকের (রবিবার) মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণে যে টাকা খরচ হয়েছে তা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘটনা কী কারণে ঘটলো তা খুঁজে বের করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফরিদ আহমেদকে কোন ফান্ড থেকে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘কোনও একটি চ্যারিটি ফান্ড থেকে এই টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষকে মানবিক সহায়তা দিতে সরকার এ পর্যন্ত ৫৭৪ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ পরিবার উপকৃত হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছিলেন ।
এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা ৩৩৩ নম্বরটি প্রচার করেছি। কেউ খাদ্যকষ্টে থাকলে ফোন করলে তাঁকে তালিকাভুক্ত করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। কাউন্সিলরদের বলেছি যে যেখানে থাকুন না কেন খাদ্যকষ্টে থাকলে তাঁকে এনআইডির ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা দিতে হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাধারণ ত্রাণ হিসেবে নগদ ১২১ কোটি টাকা, ভিজিএফের জন্য ৪৭২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বড় সিটি করপোরেশনগুলোকে ৫৭ লাখ টাকা করে এবং ছোট সিটি করপোরেশনগুলোকে ৩২ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। পৌরসভায় ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোতেও টাকা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেশের সব সিটি করপোরেশনের অনুকূলে শিশুখাদ্য কিনতেও আরও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

লেখক : প্রবাসী ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট।

Advertisement