ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: গানে গানে বন্ধুত্বের প্রকাশ, সেই গান আড্ডায় বসে সবাই মিলে এক গিটারে সুর তোলাই হোক কিংবা ইনবক্সে আরেকজনকে পাঠিয়ে হোক মনের অব্যক্ত ভাবের সম্প্রসারণ—বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা গান সব সময়ই অবদান রেখেছে সম্পর্কের উষ্ণতা বোঝাতে। এ ক্ষেত্রে ভাষা, দেশ, ধর্ম, জাতি কখনই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং সেসব ছাপিয়ে গেছে বন্ধুত্বের গান।
পাশ্চাত্য সংগীতের কথাই ধরা যাক। অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যান্ড কুইন-এর গান ‘ফ্রেন্ডস উইল বি ফ্রেন্ডস’ প্রকাশ পায় ১৯৮৬ সালে। জেমস টেইলরের একটি গান ‘ইউ হ্যাভ গট অ্যা ফ্রেন্ড’ প্রকাশ পায় ১৯৭১ সালে। প্রকাশের পর থেকে বন্ধুত্ব নিয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশের গানের তালিকায় প্রথম দিকে রয়েছে এই গান দুটি। শুধু এঁরাই নন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও অনেক শিল্পী কাজ করেছেন বন্ধুত্ব নিয়ে। এর মধ্যে ফু-ফাইটারস ব্যান্ডের গান ‘ফ্রেন্ড অব আ ফ্রেন্ড’, মার্সমেলো অ্যান্ড এনা ম্যারির ‘ফ্রেন্ডস’, মাইলি সাইরাসের ‘ট্রু ফ্রেন্ড’, ব্রুনো মার্সের ‘কাউন্ট অন মি’ গানগুলো অন্যতম। গানের তালিকা না করে বলা যায় বন্ধুত্ব নিয়ে গান করেননি এমন সংগীতশিল্পীই পাওয়া কঠিন। আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে প্রতিনিয়তই নতুন আঙ্গিকে পরিবেশিত হচ্ছে মিউজিক ভিডিওসহ গান। যার মাধ্যমে দর্শকদের কাছে শিল্পীরা গানের মূল অভিব্যক্তি তুলে ধরতে পারছেন আরও নিখুঁতভাবে।
আমাদের দেশীয় সংগীতেও বন্ধুত্ব নিয়ে সৃষ্টির কমতি নেই। বন্ধু আমার চলচ্চিত্রে ‘একটাই কথা আছে বাংলাতে’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। বন্ধুত্ব নিয়ে উল্লেখযোগ্য গানগুলোর একটি এই গান। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী এবং মুন্না আজিজ। বাংলাদেশের বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যান্ডের বন্ধুত্ব নিয়ে গান আছে। সেগুলো জনপ্রিয়তার দিক থেকে একবিন্দুও কম নয়। যেমন ফিলিংসের গান ‘তবে বন্ধু নৌকা ভেড়াও’, চিরকুটের ‘বন্ধু গো’, ওয়ারফেজের ‘বন্ধু’, শূন্য ব্যান্ডের ‘বন্ধুর গান’ শিরোনামের গানগুলো তরুণদের মধ্যে সমানতালে জনপ্রিয়। শুধু ব্যান্ড নয়, একক শিল্পীরাও গেয়েছেন বেশ কিছু গান। গানগুলো জনপ্রিয় হয়েছে ঢের। পার্থ বড়ুয়ার গাওয়া ‘ও বন্ধু তোকে মিস করছি ভীষণ’ গানটি শুনে বন্ধুকে মিস করেননি এমন মানুষ কমই আছে। আর তপুর গাওয়া ‘বন্ধু’ নতুন করে চিনিয়েছে প্রিয় বন্ধুকে। এই গানটির সংগীতায়োজন করেছিলেন রাফা। এ ছাড়া জয় শাহরিয়ারের কথা ও সুরে মিনারের গাওয়া ‘বন্ধু’ প্রকাশিত হয়েছে গত বছর। এই গানটিও পছন্দ করেছেন এই সময়ের তরুণেরা। আজকাল শুধু গান গাওয়া নয়, গানগুলোর দারুণ ভিডিও নির্মাণ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে রেকর্ড লেবেল প্রতিষ্ঠানগুলো। আর দারুণ মিউজিক ভিডিওর ফলে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে গানগুলো খুব দ্রুত পৌঁছেও যাচ্ছে শ্রোতার কাছে। শুধু এ দেশেই নয়। বন্ধুত্বের ছোঁয়া আছে ভারতের বাংলা গানেও। যেমন ‘বন্ধু তোমায় এ গান শোনাব’ গানটি চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ডের হলেও দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয়। আর সংগীতশিল্পী কবির সুমন এবং অঞ্জন দত্তের ‘দুটো বন্ধু’ শিরোনামের গানটি শোনার পর বন্ধুত্বে ভিত গড়ে দেয় এখনো। বাংলা গানের দুজন কিংবদন্তি শিল্পীর এই মনোজ্ঞ সৃষ্টি এখনো সমানভাবেই শ্রোতাদের ভালোবাসা পেয়ে যাচ্ছে।
বলিউডে বন্ধুত্ব-বিষয়ক হিন্দি গানের অভাব নেই। সত্তরের দশকে শোলে সিনেমার ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে’ ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল গোটা ভারতেই। আধুনিক সময়ের গানগুলোর মধ্যে কৃষ্ণ কুমার কুন্নাথের (কেকে) গাওয়া গান ‘ইয়ারো’ মুখে মুখে ঘুরেছে সবার। অভিজিৎ এবং উদিত নারায়ণের গাওয়া ‘দোস্তি কেয়া হ্যাঁয়’ গানটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায় ২০০৮ সালে। এদিকে পুরানি জিন্স চলচ্চিত্রের গান ‘ইয়ারি ইয়ারি’-ও পেয়েছে শ্রোতাদের ভালোবাসা। রং দে বাসন্তি চলচ্চিত্রে এ আর রাহমানের সুরে ‘রুবারু’ গানটি ২০০৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় রাতারাতি সুপারহিট পর্যায় চলে যায়।
প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের ব্যান্ড জুনুনের গাওয়া ‘দোস্তি’ সাড়া ফেলেছিল উপমহাদেশে। ১৯৯৮ সালে জুনুন ব্যান্ডের দোস্তি অ্যালবামের এই গানটি টাইটেল ট্র্যাক হিসেবে প্রকাশিত হয় ওই সময়।
মূল কথা হলো, সংগীত এমনি একটি মাধ্যম যা মনের ভাব প্রকাশে কথ্য ভাষার থেকেও বেশি গভীরতা রাখে। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত না করে তাকে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখার জন্যই আমরা বন্ধুকে নিয়ে গান লিখি, সুর করি, সেই গান বন্ধুদেরই শোনাই। চারপাশের হাজারো নেতিবাচক প্রভাবকে এভাবেই প্রতিনিয়ত হাসিমুখে উপেক্ষা করতে পারি। বন্ধুর জন্যই তো সব, সবার জন্যই থাকুক বন্ধুত্ব।