পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা ভোট শনিবার (৯ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য জাতীয় পরিষদ আজ দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসতে চলেছে।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটগ্রহণ আজকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।এই সপ্তাহের শুরুতে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির ৩ এপ্রিলের দেওয়া রায়কে বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কাসিম সুরির ওই রায়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়েছিল এবং পরবর্তীতে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।পাকিস্তানের সংসদের ৩৪২ সদস্যের মধ্যে বিরোধীদের আনা অনাস্থার পক্ষে ১৭২টি ভোট দরকার।
ইতোমধ্যেই সংসদ ভবনে আইনপ্রণেতারা আসতে শুরু করেছেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ইসলামাবাদে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি রাখা হয়েছে।তবে আজকের অধিবেশনে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, অধিবেশনের সভাপতিত্ব কে করবেন। কারণ বিরোধীরা স্পিকার আসাদ কায়সার এবং কাসিম সুরির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেছে।এদিকে পাকিস্তানি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ পুনর্বহাল করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে এই রায়ে তিনি হতাশ বলে জানিয়েছেন। ইমরান বলেছেন, চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে আদালত ‘হুমকির চিঠি’ দেখে নিতে পারতেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমদানি করা’ কোনো সরকারকে মেনে নেবেন না।কাল রবিবার তিনি শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভে নামতেও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান গতকাল শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন।এদিকে জাতীয় পরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্যরা। গতকাল দলের রাজনৈতিক কমিটির সভায় এই প্রস্তাব উঠে আসে। জাতীয় পরিষদের পাশাপাশি খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদ থেকেও পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, আদালতের রায়ে তিনি হতাশ। পাকিস্তান সরকারের পতন ঘটাতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি যতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত ছিল, আদালত বিষয়টি ততটা গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে আদালত ‘হুমকি চিঠিটি’ দেখে নিতে পারতেন। কিংবা বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নিতে পারতেন।ইমরান এ-ও বলেন, ‘আমি আদালত ও বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। …দেশের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অভিভাবক হলো বিচার বিভাগ।তরুণরা পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য কী দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছি? আমাদের পার্লামেন্ট সদস্যরা নিজেদের বিবেক বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমনকি সংরক্ষিত আসনের সদস্যরাও নিজেদের বিক্রি করে দিচ্ছেন। ’বিদেশি ষড়যন্ত্রের ‘হুমকির চিঠির’ বিষয়ে ইমরান বলেন, এই হুমকি কোড (সংকেত) হিসেবে এসেছে। এই কোড সংবাদমাধ্যম বা জনগণের সামনে প্রকাশ করা হলে পাকিস্তানের অনেক গোপন তথ্য প্রকাশ হয়ে যাবে।গণপদত্যাগের পরামর্শ : ইমরানের দল পিটিআইয়ের রাজনৈতিক কমিটির সভা শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। ইমরান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জাতীয় পরিষদ ও দুই প্রাদেশিক পরিষদ থেকে পদত্যাগের পরামর্শ আসে। এর মধ্যে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে ক্ষমতায় আছে ইমরানের দল পিটিআই। শুক্রবার বিরোধী দলগুলো খাইবার পাখতুনখাওয়ায় প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধেও অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব তুলেছে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের নেতা শেখ রশিদ ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের হাতে এখন শেষ বিকল্প গণপদত্যাগ করা। গত বৃহস্পতিবার তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে বলেছেন। বিরোধী দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে শেখ রশিদ আরো বলেন, ‘ডাকাত-লুটেরাদের বিরুদ্ধে শেষনিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।অনাস্থা ভোট শনিবার: সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনাস্থা ভোটে টিকতে ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদে ইমরানকে ১৭২ ভোট পেতে হবে। ইমরানের দলের রয়েছে মাত্র ১৫৬ আসন। এর মধ্যেও বেশ কিছু নেতার ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ইমরানের পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত।মূলত এই অনাস্থা ভোট এড়ানোর জন্য কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন ইমরান। সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিয়ে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।