চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৫ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এসময় পুলিশ-শ্রমিকের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পরিণত হয় প্রকল্প এলাকায় জুড়ে।শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. সওগাতুল ফেরদৌস বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অবস্থায় অনেককে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। নিহত ৪ জন হলেন- মোহাম্মদ রাহাত (২৫), রনি (২২), শুভ (২৪), আহমদ রেজা মীর খান (১৮)। চার জনই কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের শ্রমিক। এ ঘটনায় গুরুতর আহত গুলিবিদ্ধ ১২ জন শ্রমিকের অবস্থা আশংকাজনক হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান ওই চিকিৎসক।পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মু. হাবিবুল্লাহ্ (১৯) নামের একজন মারা যান। বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে খবর নিয়ে জানা যায় ২৫-৩০ জনের অধিক শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নেন।স্থানীয় ও নিহত শ্রমিকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকরা রমজান মাস উপলক্ষে নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া, কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, প্রতি ঘণ্টা বেতন ৫০ টাকার স্থলে ৬০ টাকা করা, থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থা করার দাবি জানায় শ্রমিকরা।তাদের এ দাবি না মেনে উল্টো চাকরি থেকে ছাঁটাই করা ও বেতন কেটে রাখার হুমকি দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে ফুঁসে উঠে শ্রমিকরা।আহত শ্রমিকদের দাবি, পুলিশের সাথে স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও শ্রমিকদের উপর চড়াও হয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়।
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ও নিহতের খবরে পুরো কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র জুড়ে হাজার হাজার লোকজন জড়ো হতে দেখা যায়। সংঘটিত ঘটনায় স্বজনেরা আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশের বিরুদ্ধে।এঘটনায় এলাকার পরিস্থিতি যে কোন মুহূর্তে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলে আশংকা প্রকাশ করছে স্থানীয়রা। শ্রমিকরা ভয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে।বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রথমে এস. আলম বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরে উস্কানি দিয়ে আশে পাশের গ্রামবাসীকে এতে সম্পৃক্ত করা হয়। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।এদিকে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত ও নিহত শ্রমিকের স্বজনদের আর্ত-চিৎকারে পুরো পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। এলাকা জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।