ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ‘বাংলাদেশ ইজ নট ইউক্রেন’ বা বাংলাদেশ ইউক্রেন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র এমন মন্তব্য নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড চলছে মার্কিন মুলুকে। একজন সুপরিচিত সাংবাদিকের সঙ্গে ইরান ও ইউক্রেন ইস্যুতে দেয়া সাক্ষাৎকারের পর ওই মন্তব্য করেছেন তিনি। তার দাবি, ওই সাংবাদিক একটি মানচিত্রে ইউক্রেনকে চিহ্নিত করতে গিয়ে চিহ্নিত করেছেন বাংলাদেশ। কিন্তু তার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন সাংবাদিক মেরি লুইস কেলি। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং সুপরিচিত সাংবাদিক মেরি লুইস কেলির মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ইরান ও ইউক্রেন ইস্যুতে পম্পেও’র সাক্ষাতকার নেন কেলি। ওই সাক্ষাতকারে কেলি বার বার ইউক্রেন ইস্যুতে পম্পেওর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারেন।
এক পর্যায়ে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেরি ইয়োভানোভিচকে প্রত্যাহার করা নিয়ে প্রশ্ন করেন কেলি। এ বিষয়ে পম্পেও সরাসরি কোনো উত্তর না দিলে আবারও একই প্রশ্ন করেন। বিজনেস ইনসাইডার সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
সাক্ষাতকারের পরে কেলি দাবি করেন, ওই সাক্ষাতকারের কয়েক মুহূর্ত পরে পম্পেওর একজন স্টাফ তার সঙ্গে কেলিকে কোনো রেকর্ডার ছাড়া ভিতরে ডাকেন। কেলি বলেন, তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত লিভিং রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমাণ ছিলেন পম্পেও। তাকে দেখেই তিনি চিৎকার করতে থাকেন। যতক্ষণ সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে ঠিক সম পরিমাণ সময়ে তার ওপর রাগারাগি করতে থাকেন পম্পেও। কারণ, তিনি ইউক্রেন নিয়ে করা প্রশ্নে সন্তুষ্ট ছিলেন না। পম্পেও জানতে চান, আপনি কি মনে করেন আমেরিকা ইউক্রেনকে তোয়াক্কা করে? এ ছাড়া তিনি কিছু অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করেন বলে কেলির অভিযোগ। কেলি বলেন, আমি একটি মানচিত্রে ইউক্রেন চিহ্নিত করতে পারবো কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন পম্পেও। আমি হ্যাঁ বলি। এ সময় তিনি সহযোগীদের একজনকে ডেকে নেন এবং বিশ্বের এমন একটি মানচিত্র আনতে বলেন যেখানে কোনো দেশ চিহ্নিত করা নেই। (মানচিত্র আনার পর) আমি ইউক্রেনকে চিহ্নিত করলাম। তিনি মানচিত্র সরিয়ে নিলেন। তিনি বললেন, এ বিষয়ে জনগণ জানতে পারবে। তিনি ঘুরে গেলেন এবং বললেন, তাকে কাজ করতে হবে। সময় দেয়ার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানালাম।
কিন্তু কেলির এই দাবিকে মিথ্যা বলে বিবৃতি দিয়েছেন মাইক পম্পেও। বলেছেন, ওই সাংবাদিক বিকৃতমস্তিষ্ক সম্পন্ন। বলেছেন, ওই সাংবাদিক দু’বার মিথ্যা বলেছেন। সাংবাদিক কেলি সাংবাদিকতার মূলনীতি ও শালীনতা লঙ্ঘন করেছেন। যখন সাংবাদিকরা অব্যাহতভাবে তাদের এজেন্ডা প্রদর্শন করেন এবং সততার অভাব দেখাতে থাকেন তখন মার্কিন জনগণ তাদেরকে আর বিশ্বাস করে না। এটা খারাপ কিছু না যে, বাংলাদেশ ইউক্রেন নয়। এর মধ্য দিয়ে মাইক পম্পেও বোঝাতে চেয়েছেন ওই সাংবাদিক ইউক্রেন চেনেন না। তাকে ম্যাপে ইউক্রেন দেখাতে বলা হলে তিনি দেখিয়েছেন বাংলাদেশকে। এ নিয়ে মার্কিন মিডিয়ায় তুলকালাম চলছে।
রিপোর্টে বলা হয়, মেরি লুইস কেলি যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্রডকাস্টার ও লেখক। তিনি ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওতে ‘অল থিংস কনসিডার্ড’ অনুষ্ঠানের সংবাদ উপস্থাপিকা। তিনি এর আগে সিএনএন এবং লন্ডনে বিবিসির হয়ে কাজ করেছেন। শুক্রবার তিনি মাইক পম্পেওর সাক্ষাতকার নেন। এ নিয়ে শনিবার বিবৃতি দিয়েছেন মাইক পম্পেও। এখানে তার পুরোটা তুলে ধরা হলো- ‘এনপিআর-এর সাংবাদিক মেরি লুইস কেলি আমার কাছে দু’বার মিথ্যা বলেছেন। প্রথম হলো গত মাসে আমাদের সাক্ষাতকারে বসা নিয়ে। আবার শুক্রবার মিথ্যা বলেছেন আমাদের সাক্ষাতকার পরবর্তী কথোপকথন নিয়ে। এটা লজ্জাজনক যে, এই সাংবাদিক সাংবাদিকতার মূলনীতি লঙ্ঘন করেছেন। সততার অভাব রয়েছে তার মধ্যে। মিডিয়া কিভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনকে আঘাত করতে বিকৃতমস্তিষ্কের পরিচয় দেয়, তার আরো একটি প্রমাণ এটা। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে, মিডিয়ার যারা অব্যাহতভাবে তাদের এজেন্ডা ও সততার অভাব প্রদর্শন করছে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বিশ্বাস করে না। এটা খারাপ কিছু নয় যে, বাংলাদেশ ইউক্রেন নয়।