বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদের সম্মেলন ও গুণীজনদের সংবর্ধনা

গত ২৭ফেব্রুয়ারী রোববার বেলা ২টায়,পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে,জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে,উদীচীর পতাকা সহ ২টি দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদের সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সভাপতি হারুন অর রশীদ। বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন সিপিবি যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এডভোকেট আবেদ আলী আবিদ এবং ব্রিটিশ পতাকা উত্তোলন করেন যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হেমলেটসের মেয়র জন বিগস ও টাওয়ার হেমলেটসের স্পীকার,কাউন্সিলর আহবাব হোসেন।

উদ্বোধক হিসেবে ভার্চুয়াল বক্তব্য করেছেন ভাষা সৈনিক ডাক্তার আহমেদ জামান। সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদের সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সভাপতি হারুন অর রশীদ। প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি ডাক্তার রফিকুল হাসান খান জিন্নাহ। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এডভোকেট কমরেড আবেদ আলী আবিদ, যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হেমলেটসের মেয়র জন বিগস,টাওয়ার হেমলেটসের স্পীকার,কাউন্সিলর আহবাব হোসেন,লন্ডন কাউন্সিল ম্যান মনসুর আলী, কাউন্সিলর ছাদ চৌধুরী, সিপিবি যুক্তরাজ্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড নিছার আহমদ।লন্ডন শহর ছাড়াও বিলেতের বিভিন্ন শহর হতে কমিউনিটির বিভিন্ন জনদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযাদ্ধা লোকমান হোসেন,সাংস্কৃতিক কর্মী এনায়েত সারোয়ার, বাংলাদেশি ওয়াকার্স কাউন্সিলের সভাপতি শাহরিয়ার বিন আলী,ডক্টর রব উদ্দীন,মোস্তফা কামাল,সাংবাদিক সায়েম চৌধুরী,ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান মিল্লিক প্রমুখ।উদ্বোধকের আলোচনায় ভাষা সৈনিক ডাক্তার আহমেদ জামান গৌরব ময় উদীচীর ঐতিহ্য,ইতিহাস সাংস্কৃতিক চর্চার স্মৃতিচারণ করেন। সব মিলিয়ে এখন ভাষার মাস অসাধারণ একটি সময়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি উছ্বাস প্রকাশ করেন।সম্মাননা সংবর্ধিত গুণীজনেরা হলেন ভাষা সৈনিক ডাক্তার আহমেদ জামান,৭১-এর কন্ঠযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেণু ও টাওয়ার হেমলেটস স্পীকার আহবাব হোসেন।উল্লেখ্য ভাষা আন্দোলন ও প্রগতিশীল রাজনীতিতে অবদানের জন্য ভাষা সৈনিক ডাক্তার আহমেদ জামান,সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৭১-এর কন্ঠযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেণু ও যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হেমলেটসে বাংলা শিল্পী-সংস্কৃতির বিশেষ অবদানের জন্য কাউন্সিলর আহবাব হোসেনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। উক্তপর্বে সভা সঞ্চালনা করেন আমিনা আলী ও জোবের আখতার সোহেল।

এর পরপরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যপূর্ণ মাস,আগত বসন্ত ঋতু,বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সম্প্রীতি মূলক গান,সম্প্রতি ঘটমান যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা এবং সম্মেলন এসব বিষয়ের সমন্বয়ে সাজানো হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ‘সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস’এর ছাত্রছাত্রী সহ উদীচী যুক্তরাজ্য সংসদের কর্মী ও সদস্যরা গান,নৃত্য,আবৃত্তি পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হেলেন ইসলাম ও রওশন জাহান সিমি।

অভ্যর্থনা পরিষদের তত্ত্বাবধানে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন হয়। বিরতির পর সংগঠনটির সম্মেলন অধিবেশনে পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে নির্বাচনী কমিটির(সাবজেক্ট কমিটি) মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষনা করা হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন হারুন অর রশীদ,সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন জোবের আখতার সোহেল। তাছাড়া উদীচী কার্যকরী কমিটিকে পরিচালনার জন্য উদীচীর গঠনতন্ত্র মোতাবেক সবকটি বিভাগের জন্য ২৯সদস্যদের নাম উল্লেখিত ও ৪জনকে কোপ্ট করে মোট ৩৩জন বিশিষ্ট নতুন কমিটি করা হয়। তাঁরা হলেন গোপাল দাস,শেখ নুরুল ইসলাম,সেলিনা শাফী,আমিনা আলী,জলি রশীদ,হেলেন ইসলাম,সুশান্ত দাস(প্রশান্ত),অসীমা দে,ইভা আহমেদ,হামিদা ইদ্রিস,আসমা শিল্পী,সারথী ভৌমিক,শামসুদ্দীন,অনুপম রহমান,সেলিম মালেক,বাবলু দে,জলীল আহমেদ,রাজিয়া রহমান,সালাউদ্দীন শাহীন,ডাক্তার রফিকুল হাসান খান জিন্নাহ,নাছিমা কাজল,আনছার ভাই,হেলাল আহমদ,নাসিমা আলী,মুনজেরীন রশীদ প্রমুখ।নির্বাচনী কমিটির (সাবজেক্ট কমিটি) প্রস্তাবনা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ার পর নব গঠিত কমিটির সকলকে শপথ পাঠ করান বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। উক্ত কাউন্সিল পর্ব সভাপতিত্ব করেন গোপাল দাস। সঞ্চালনা করেন নুরুল ইসলাম। এতে সাধারন সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন আমিনা আলী ও শোক প্রস্তাব করেন মুনজেরীন রশীদ।

উল্লেখ্য বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দেশের বৃহত্তম সাংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৬৮ সালে বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, সহ একঝাঁক তরুণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গঠিত হয় ‘উদীচী’। জন্মলগ্ন থেকে এই সংগঠনটি অধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্যের সমাজ নির্মাণের সংগ্রাম করে আসছে। ১৯৬৮, ’৬৯, ’৭০ ও ’৭১, সালে বাঙালির সার্বিক মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে গড়ে তোলে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। ১৯৭১ সালে উদীচীর কর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। ২০১৩ সালে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক লাভ করা এই সংঠনটির ৭১টি সাংগঠনিক জেলা সংসদ এবং জেলা সংসদের অধীনে ৩১৫টি শাখা রয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যে ১৯৮৯ সালের ১৪ অক্টোবর হতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।

Advertisement