ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাতিল করা পারমাণবিক চুক্তি তিনি পুনর্বহাল করবেন। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এখন কি তিনি চাইলেই সেই চুক্তি পুনর্বহাল করতে পারবেন! পরিবর্তিত পরিস্থিতি বলছে বিষয়টি অতেটা সহজ হবে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। ২০১৫ সালে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেন। কিন্তু ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি একতরফাভাবে ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করেন। তবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়নি ইউরোপীয়ান মিত্ররা।
ওই চুক্তি জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্লান অব একশন (জেসিপিওএ) নামে অভিহিত করা হয়। এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির জন্য তাদের পুরো আর্থিক খাতের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ দেয়। কালো তালিকাভুক্ত করে সব আর্থিক খাতকে। এর ফলে ইরানে আকস্মিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। দেখা দেয় ওষুধের সঙ্কট। ট্রাম্পের এমন প্রচেষ্টার জোর বিরোধিতা করেন ইউরোপীয়ান মিত্ররা। কিন্তু তিনি তাতে কান দেননি। এরপর এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের এই ধারা পাল্টে ফেলার প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন। তবে তিনি কিভাবে এই প্রতিশ্রুতি রাখবেন তা পরিষ্কার নয়। তিনি বলেছেন, ইরান যদি সব কিছু মেনে নেয় তাহলে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে ওই চুক্তিতে যুক্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে আইন ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিতে প্রথমে ফিরতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে- এ দাবি তুলেছে ইরান। গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ সিবিএস নিউজ টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, জেসিপিওএ’র কোনো শর্ত নিয়ে নতুন করে কোনো অবস্থায়ই আলোচনা করবে না ইরান। তার ভাষায় ‘যদি আমরা তেমনটাই চাইতাম, তাহলে চার বছর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গেই সেই আলোচনা করতে পারতাম’। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক গ্রুপ ইউরেশিয়া গ্রুপের ইরান বিষয়ক সিনিয়র বিশ্লেষক হেনরি রোম বলেছেন, বাইডেন প্রেসিডেন্সির প্রথম কয়েকটি মাস ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রতে সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আরো বেশ কিছু অগ্রাধিকার নিয়ে চাপে থাকবেন বাইডেন। অন্যদিকে আলোচনা ইস্যুতে তেহরানও খুব সতর্ক থাকবে। কারণ, আগামী জুনে সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তার ক্ষমতার প্রায় চার বছরের কাছাকাছি। আগামী আগস্টের শুরুতে তার এ পদের মেয়াদ শেষ হবে। ২০২১ সালের ১৮ই জুন সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে তার পদে কে আসবেন। ওদিকে ফেব্রুয়ারিতে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্লামেন্ট গঠন করে ইরান। পার্লামেন্ট নির্বাচনে মাত্র শতকরা ৪২ ভাগ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের চার দশকের ইতিহাসে এটাই সেখানে সবচেয়ে কম সংখ্যক ভোট। তা সত্ত্বেও হেনরি রোম মনে করেন, দুই দেশই ২০২১ সালে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে। তিনি মনে করেন এর অধীনে তেহরানকে পারমাণবিক কর্মসূচির কিছু কাজ স্থগিত রাখতে হতে পারে। যেমন অত্যাধুনিক সেন্ট্রিফিউজ উন্নয়ন ও তার পরীক্ষা বন্ধ করতে বলা হতে পারে। বিনিময়ে ইরানকে একটি আন্তর্জাতিক ঋণ ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় থাকতে পারে বৈধভাবে প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রির অনুমতি। হেনরি রোম মনে করেন, বিস্তৃত একটি বোঝাপড়া চূড়ান্ত হতে পারে ২০২২ সালে।
ইরানের তেল রপ্তানি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান টার্গেট। এর ফলে প্রতিদিন ইরানের তেল রপ্তানি কমে যায় দিনে ২৫ লাখ ব্যারেল। তা সত্ত্বেও ইরান এখনও একটি অজ্ঞাত সংখ্যক তেল রপ্তানি করছে। এ অবস্থায় ইরানে তেল রপ্তানি সেপ্টেম্বরে বেড়ে যায়। পর্যাবেক্ষকরা মনে করেন এর পরিমাণ দিনে ৪ লাখ থেকে ১৫ লাখ ব্যারেল হতে পারে।
জেসিপিওএ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয়ান দেশগুলো ট্রাম্প প্রশাসনকে এতে ফিরতে বার বার অনুরোধ করেছে। কিন্তু তারা ফেরেনি। ওদিকে অবরোধ দেয়ার ফলে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি বৃদ্ধি করে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। এ তিনটি একসঙ্গে ই৩ নামে পরিচিত। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের পররাষ্ট্র বিষয়ক সিনিয়র পলিসি ফেলো ইলি জেরানমায়ে বলেছেন, জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার ফলে নতুন করে এখন কাজ শুরু করবে ইউরোপ। তারা জো বাইডেনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জেসিপিওএ’তে ফেরানোর চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, ই৩ দেশগুলোর সরকারগুলো এ বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করবে। এ ছাড়া তেহরান শর্তগুলোর কতটা গ্রহণ করছে সেদিকে দৃষ্টি রাখবে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। ইলি জেরানমায়ে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ইরানের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামোতে পৌঁছে যাবে বাইডেন প্রশাসন। যদি সব পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে তাহলে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি করা সম্ভব।