বাণিজ্যযুদ্ধের সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে: কিসিঞ্জার

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যদি তাদের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ সমাধানে ব্যর্থ হয় তাহলে তা এক সশস্ত্র যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। বৃহস্পতিবার এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বহুল আলোচিত কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি অর্থনীতির এই দুই জায়ান্ট দেশের ভবিষ্যত নিয়ে ব্লুমবার্গ নিউ ইকোনমি ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বেইজিংয়ে। সেখানেই এমন গুরুগম্ভীর মন্তব্য করেন কিসিঞ্জার। ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার মিশনে রয়েছেন তিনি। কিসিঞ্জার বলেছেন, বাধাহীনভাবে যদি দুই দেশের মধ্যে এই (বাণিজ্যিক) যুদ্ধ চলতেই দেয়া হয় তাহলে এর ফল হবে আরো বেশি ভয়ানক। ইউরোপে যেমনটা হয়েছিল তার চেয়েও খারাপ হবে। তুলনামুলক একটি ছোট সঙ্কটের কারণে ওই সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল।

কিন্তু এখনকার অস্ত্রশস্ত্র আরো শক্তিশালী। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

উল্লেখ্য, প্রায় দেড় বছর ধরে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। এ সমস্যার সমাধান করার জন্য উভয় পক্ষ ধারাবাহিক সমঝোতায় বসেছে, যাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছা যায়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। পাশাপাশি কূটনৈতিক ফ্রন্টের দিক থেকেও উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর অপারেশন নিয়ে ওয়াশিংটনের কড়া সমালোচনা করেছে বেইজিং। অন্যদিকে জাতিগত উইঘুরদের গণহারে বন্দি করার জন্য চীনের কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। আবার হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিরা যে বিক্ষোভ করছে তাতে রয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের সমর্থন।

হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, বড় একটি অর্থনীতির দেশ চীন। আমরা মার্কিনিরাও। তাই বিশ্বজুড়ে আমরা একে অন্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত। ৯৬ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত এই কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলাকালে একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল দুই দেশের পারমাণবিক সক্ষমতাকে কমিয়ে আনা। এটাই ছিল শীর্ষ অগ্রাধিকার। তবে চীনের সঙ্গে সামরিক শক্তির বিষয়ে চুক্তির কোনো ফ্রেমওয়ার্ক নেই। যদি দু’পক্ষই বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ইস্যুতে একে অন্যের সঙ্গে সংঘাত দেখতেই থাকে তাহলে তা হতে পারে মানবজাতির জন্য এক বিপদজনক বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সংঘাতময় অবস্থা নিয়ে সমঝোতার ক্ষেত্রে বাণিজ্য সমঝোতা কেবল একটি বিকল্প।

এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলোর অস্থিরতা কি নতুন একটি শীতলযুদ্ধের কারণ হতে পারে কিনা। জবাবে হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, তিনি আশা করেন অতি উচ্চ আবেগপ্রবণ ইস্যুগুলোও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও তখনকার কমিউনিস্ট চীনের মধ্যে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপনের আলোচনা শুরু করতে ১৯৭১ সালে গোপনে বেইজিং সফর করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত বছর নভেম্বরে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

Advertisement