ব্রিট বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের সুবর্ণ জয়ন্তী কর্মসূচী ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ও সরকারের নানা প্রতিবন্ধকতা কর্মসূচি পালনে অসুবিধা তৈরি করছে জানিয়ে এ ঘোষণা দেয় বিএনপি।
আজ বুধবার গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, বিএনপি যেন কর্মসূচি স্বচ্ছন্দে যাতে পালন করতে না পারে তার জন্য সরকার নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সরকারের জন্মশত বার্ষিকী ও সুবর্ণ জয়ন্তী পালন উপলক্ষে বিদেশী মেহমানদের সফরকে কেন্দ্র করে বিএনপির বেশ কিছু কর্মসূচির অনুমতি পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে রয়েছে ২২ মার্চের সিম্পোজিয়াম, ২৫ মার্চের আলোচনা সভা, ২৬ মর্চের সুবর্ণ জয়ন্তীর র্যালী ও ৩০ মার্চের সোরওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশের অনুমতি।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়ংকর ও বিপদ জনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি একটানা ৭ সপ্তাহ যেখানে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল, সেখানে চলতি সপ্তাহে তার হার ১৩.৬৯ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কল্য ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৫৪ জন, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা। সরকারের দেয়া এ হিসাবও প্রকৃত চিত্র নয় বলে বিশেষজ্ঞমহল মনে করে। গত কয়েক দিন যাবৎ দৈনিক যে পরিমান পরীক্ষা করা হচ্ছে, তার মধ্যে বড় অংশ জন্ম শত বার্ষিকী ও সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানকে ঘিরে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে বিদেশগামী যাত্রী। তাই সাধারণ জনগণকে পরিক্ষার আওতায় আনলে সংক্রমণের সংখ্যা আরো অনেক গুনে বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিটি পরিক্ষা কেন্দ্রের সামনে পরিক্ষা প্রার্থীদের লাইন প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতা ও শংকা।
তিনি বলেন, পরিতাপের বিষয়, সরকার দেশের জরুরী পরিস্থিতি ও জনস্বার্থের হুমকিকে উপেক্ষা করে তাদের অনুষ্ঠানে জনসমাগম ও বিদেশী মেহমানদের স্বাগত জানাতে গিয়ে দেশের মানুষকে আরো ঝুকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনস্বাস্থ্যের হুমকির চেয়ে বিদেশী সরকার প্রধানদের সার্টিফেকেট লাভকে প্রাধ্যন্য দিচ্ছে। করোনা কালের এ কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের বাংলাদেশ সফরে জনগণ স্বস্তিবোধ করছেনা। এ বিষয়ে জনগণের ক্ষোভ-বিক্ষোভকে স্বৈরাচারী কায়দায় দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে সকল মহল মনে করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাশিয়ানী উপজেলার ওরাকান্দি গ্রামের মন্দির সমূহ এবং সাতক্ষীরা শ্যামনগরে যশে^ারেশ^রী কালীমন্দির পরিদর্শনকে পশ্চিম বঙ্গের নির্বাচনের প্রচারের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। হিন্দু ধর্মীয় মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুর ১৮১২ সালে ওরাকান্দি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পশ্চিম বঙ্গের লক্ষাধিক মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটকে প্রভাবিত করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী এহেন আকস্মিক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। অথচ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহু অমিমাংসিত বিষয় বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোন পক্ষেরই কোন মাথা ব্যথা নেই। আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে, ইতিপূর্বেই তিস্তা পানি সংক্রান্ত চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, একটিরও সমাধান হয়নি। উপরন্ত বাংলাদেশ ভারতের সাথে একটির পর একটি চুক্তি করছে যা- বাংলাদেশের কোনো উপকারে আসছেনা।
তিনি আরো বলেন, দেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি ও বিদেশী মেহমানদের স্বাগত জানানো ও অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের ঝুকি যে পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে তার প্রেক্ষাপটে দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে জনমনে আতংক ও উৎকণ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিএনপি’র গৃহিত সুবর্ন জয়ন্তীর কর্মসূচী আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হলো। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমাদের গৃহিত কমূর্সচীগুলো পুনরায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করা হবে।