ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ভারতের বেঙ্গালুরুতে ‘অবৈধ বাংলাদেশী’দের গ্রেপ্তার ও আটক করতে অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। কর্নাটকের বিজেপি সরকারের চাপে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। তবে এই অভিযানে গ্রেপ্তার বা আটক হওয়া ব্যক্তিদের জন্য কোনো কার্যকর আটককেন্দ্র নেই শহরটিতে। এমতাবস্থায়, আটক করা ব্যক্তিদের দেশে ফেরত পাঠানোর আগে বন্দি রাখার ব্যবস্থা করতে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে কর্নাটকের হাইকোর্ট। গত আগস্টে আটক করা দুই অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীর করা এক জামিন আবেদনের শুনানিতে এমন নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট বিচারক কে এন ফানেন্দ্র।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেঙ্গালুরুতে অবৈধ বাংলাদেশী আটক অভিযান রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তিও। গত জুলাই মাসে রাজ্যটিতে ক্ষমতায় আসে বিজেপি সরকার। এরপর থেকেই এই অভিযান শুরু হয়।
কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই ক্ষমতায় এসেই জানান দেন, রাজ্যের নাগরিকদের তালিকা করা হবে। আসামের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এনআরসি তালিকা করা হবে। এছাড়া, বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও সন্দেহভাজন অভিবাসীদের আশ্রয় না দিতে শহরবাসীকে সতর্ক করেছেন।
রাজ্য সরকার থেকে মদত পেয়ে ২৫শে অক্টোবর বেঙ্গালুরুর পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশ থেকে ৬০ জন অভিযুক্ত অবৈধ বাংলাদেশীকে আটক করেছে পুলিশ। ওই অঞ্চলেই শহরের বেশিরভাগ বাংলাদেশী অভিবাসীরা বাস করেন। আটক করা ব্যক্তিদের মধ্যে ২৪ জন নারী ও ১৬ শিশু রয়েছে। তাদের সকলের বিরুদ্ধে ‘ফরেইনারস এক্ট ১৯৪৬’ ও আইপিসি আইনের ৩৭০ ধারায় পাচারের অভিযোগ এনে মামলা করেছে পুলিশ।
সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের চাপের মুখেই এই অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এই অভিযানের মাধ্যমে বিজেপি এটা প্রমাণ করতে চায় যে, তারা কথিত অবৈধ বাংলাদেশীদের সরানোর নীতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।
বোম্মাই গত মাসে দেয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, অন্যান্য দেশ থেকে ভারতে বহু মানুষ এসেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে। তারা বেঙ্গালুরু ও কর্নাটকের অন্যান্য শহরে বাস করছে। আমরা তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
কর্নাটকের বিজেপি সরকার একাধিকবার রাজ্যটিতে বহু সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশী থাকার অভিযোগ করেছে। তবে চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টে রাজ্য কর্তৃপক্ষের জমা দেয়া তথ্য অনুসারে, এমন অভিবাসীর সংখ্যা মাত্র ৩৭৩। এর মধ্যে ১২৭ জন জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর দায়িত্বে পুলিশ কর্নাটকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অধীনস্ত বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে আটক অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের নিজদেশে ফেরত পাঠানোর সকল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশকে। কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা জাগদীশ সেত্তার বলেন, আমরা একাধিকবার এই বিষয়টি তুলে ধরেছি। এমনকি রাজ্যসভাতেও। রাজ্যে লাখ লাখ বাংলাদেশী এসেছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময়ও আমরা এমনটা বলেছি। কেউ তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।
বেঙ্গালুরু পুলিশ দাবি করেছে, অপরাধ কমাতেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, শহরের অপরাধ হার কমানোর লক্ষ্যে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযান শুরু করেছে অপরাধ বিভাগ। ২৫ শে অক্টোবর এক বিশেষ প্রচেষ্টায়, ৬০ জনকে আটক করা হয়। তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আটক করা সকলে বাংলাদেশী।
পুলিশ কমিশনার রাও সম্প্রতি শহরবাসীকে কোনো অবৈধ অভিবাসীকে নিয়োগ দেয়া বা আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, এই দেশে কাগজপত্র ছাড়া অবৈধ বাংলাদেশিরা অবস্থান করছে। তারা দেশবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারে। যারা এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করবে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ষড়যন্ত্রের মামলা চালু করবো।
এদিকে, বেঙ্গালুরুতে কোনো সক্রিয় বন্দিশিবির না থাকার কারণে আটক করা সকল পুরুষ অভিবাসীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। নারী ও শিশুদের রাখা হয়েছে রাষ্ট্রীয় খরচে পরিচালিত হোস্টেলে।