ব্রিটবাংলা ডেস্ক : ১৯৯৫ সালে বিবিসির প্যানেরোমার জন্যে করা প্রয়াত ব্রিটিশ রাজবধু প্রিন্সেস ডায়ানার স্বাক্ষাতকার গ্রহনের সময় অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছিলেন বিবিসির সাংবাদিক মার্টিন বাশির। নভেম্বরে এই স্বাক্ষাতকার প্রচারের পর ডিসেম্বরে প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্সেস ডায়ানার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং ১৯৯৭ সালে প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান প্রিন্সেস ডায়ানা।
বিবিসির প্যানেরোমার জন্যে স্বাক্ষাতকার গ্রহনের সময় প্রমাণ হিসেবে একটি ব্যাংক স্টেইটম্যান্ট প্রিন্সেস ডায়ানার সামনে হাজির করেছিলেন সাংবাদিক মার্টিন বাশির। সেই স্টেইটমান্টটি ছিল নকল। সেই সময় বিবিসির গ্রাফিক ডিজাইনারদের দিয়ে তিনি মিথ্যা, বানোয়াট একটি ব্যাংক স্টেইটম্যান্ট তৈরি করিয়েছিলেন।
স্বাক্ষাতকার প্রচারের পর থেকেই এ নিয়ে প্রতিবাদ করে পুর্নাঙ্গ তদন্তের দাবী করে আসছিলেন প্রিন্সেস ডায়ানার ভাই আর্লস স্পেন্সার। সেই সময়ের বিবিসির গ্রাফিক ডিজাইনাররাও এ নিয়ে মূখ খুলেছেন। অবশেষে লর্ড ডাইসনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিবিসি। এই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সাংবাদিক মার্টিন বাশির অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে বিবিসি সহযোগিতা করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এসবই এখন সংবাদ মাধ্যমে আসছে। কিন্তু কতোজনইবা জানেন কে এই মার্টিন বাঁশির?
মার্টিন বাশির পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক। তার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ নেভি অফিসার। ৫৮ বছর বয়সী বাশির ১৯৬৩ সালের ১৯শে জানুয়ারী লন্ডনের ওয়ান্ডসওয়ার্থে জন্মগ্রহন করেছেন। ৩ সন্তানের জনক বাশির লন্ডনের কিংস কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষে ১৯৮৬ সালে বিবিসিতে যোগ দেন। বিবিসির প্যানেরোমায় কাজ করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার বিতর্কিত স্বাক্ষাতকার গ্রহণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ১৯৯৯ সালে বিবিসি ত্যাগ করেন তিনি। এরপর তিনি কিছুদিন আইটিভিতেও কাজ করেন। আইটিভিতে কাজ করার সময় তিনি মাইকেল জেকসনে উপর একটি ডকুমেন্টরী করেন। প্রিন্সেস ডায়ানার স্বাক্ষাতকার গ্রহণে অনৈতিক উপায় অবলম্বনের বিষয়টি প্রমানিত হওয়ার পর মাইকেল জ্যাকসনের পরিবার থেকেও তদন্তের দাবী উঠেছে।
২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন নিউইয়র্কে। প্রথমে কিছুদিন কাজ করেন এবিসির প্রেজেন্টার হিসেবে। এরপর এনবিসিতে এমএসএনবিসি নামে প্রোগ্রামে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন। এই অনুষ্ঠানে আলাস্কার গভর্নর এবং সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সারাহ পলিনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করায় চাকুরী হারান তিনি।
২০১৬ সালে আবার তিনি বিবিসিতে রিলিজিয়াস কারেন্ট এফেয়ার্স হিসেবে যোগ দেন। তারপর ২০২১ সালে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
লর্ড ডাইসনের নেতৃত্বাধানী স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিবিসিও। রাজ পরিবার, প্রিন্সেস ডায়ানার দু ছেলে, প্রাক্তন স্বামী এবং ভাইয়ের কাছে লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছে বিবিসি। ১৯৯৫ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার স্বাক্ষাতকার প্রচারের পর ১৯৯৯ সালে বিবিসি ত্যাগের পর দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিক মার্টিন বাশিরকে কেন বিবিসিতে নিয়োগ দেওয়া হল এ নিয়েও ব্যাপকভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে বিবিসি।
প্রিন্সেস ডায়ানার ঘটনার জন্যে সাংবাদিক বাশিরের চাইতে বিবিসিকেই বেশি দোষারূপ করা হচ্ছে এবং সমালোচনা সইতে হয়েছে। সবচাইতে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন বিবিসির তৎকালিন হেড অব বিবিসি নিউজ লর্ড হল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে তিনি বিবিসির ডাইরেক্টর জেনারেল থাকা অবস্থায় মার্টিন বাশিরকে বিবিসিতে ফিরিয়ে আনেন। যদিও এই বিতর্কের মুখে ন্যাশনাল গ্যালারির প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বিবিসির সম্পাদকীয় নীতি পরিবর্তনেরও দাবী উঠেছে। একই সঙ্গে দাবী উঠেছে বিবিসির লাইসেন্স ফি বাতিলেরও। লর্ড ডাইসনের তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে বিবিসি বিরুদ্ধে অপরাধ বিষয়ক তদন্ত হতে পারে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন হোম সেক্রেটারী প্রীতি পাটেল।