|| জুয়েল রাজ ||
সাদা-কালো সময়ের প্রজন্ম আমরা, শুক্কুর বার মানেই আমাদের জন্য ঈদ। পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি…
ব্যাটারি চার্জ নেই মানে সিনেমা দেখাও নাই, আহারে বাঁশের আগায় টানানো এন্টিনা.. ঝিরঝির পর্দা একবার ডানে ঘুরানো একবার বায়ে ঘুরানো, একটু বাতাস দিলেই আবার ঝিরিঝিরি আর “বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত এই লেখাতো আমাদের মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। কতৃপক্ষ তো জানতো না আমরা যে আন্তরিকভাবে কতোটা দুঃখ পেতাম। এক রুমে দরজা জানালা বন্ধ করে গাদাগাদি করে ৩০/৪০ জন ছেলেবুড়ো মিলে সেই টেলিভিশন দেখা প্রজন্ম আমরা । সেই সব অভিজ্ঞতা দীর্ঘ লেখা হয়ে যাবে। ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, এদের সিনেমা হলে আমরা খুশী হতাম, আর বড়রা খুশী হতেন রাজ্জাক কবরী, ফারুক, ববিতা, আলমগীর, শাবানা এদের সিনেমা প্রচারিত হলে। সাদাকালোর চেয়ে রঙিন সিনেমা আমাদের বেশী টানত, আর টানতো জসিমের ঢিসুম ঢিসুমে।
“মিষ্টি মেয়ে কবরী ” মানে একটি নাম। বড়রা যখন বিশেষন লাগিয়ে সম্বোধন করতেন, আমাদের কাছে বিশেষণও নাম ছিল। কবরী মানেই মিষ্টি মেয়ে কবরী।
সুতরাং, সারেং বউ, রংবাজ, আবির্ভাব, দ্বীপ নিভে যায়, ময়নামতি, সুজন সখী, তিতাস একটি নদীর নাম, দেবদাস, আমাদের সন্তান, অরুণ বরুণ কিরণ মালা, বঁধু বিদায় , লাল সবুজের পালা, এই নামগুলোই মনে আসছে। আর, সাদাকালো এই সিনেমাগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছিল বিটিভির ছায়াছন্দ নামের একটি অনুষ্ঠান। সেখানেই বারবার দেখতাম মিষ্টি হাসির মিষ্টি মেয়ে কবরীকে।
সেই সময়, ধীরে ধীরে আমাদের পৃথিবী দখল করে নেয় ভিসিআর, ভিসিপি, হিন্দি সিনেমা, চিজ বারিহে মাস্ত মাস্ত, পিয়ার তো হনে লাগে জারা জারা, কিংবা বাজিগর ওহ বাজিগর গানের সঙ্গীতমালা, শাহরুখ, অজয়, অক্ষয়, সাঈফ আলী, সুনীল শেঠি, আমির, সালমান খান গণ।
সেই সময় বাংলাদেশে একটু একটু আলো বিলিয়েছিলেন আরেক তরুণ সালমান শাহ।
মানুষ ঘুরে ফিরে তাঁর শিকড়েই ফিরতে চায়, ফিরে। কবরী, রাজ্জাক, ফারুক, ওয়াসিম, সোহেল রানা, জসীম, আলমগীর, শাবানা, ববিতা, সুচন্দা, রোজিনা এই প্রজন্মের অভিনয় এখন ইউটিউবের কল্যাণে দেখা হয়। কি অসাধারণ! নির্মাণ, অভিনয়…
সাদাকালো সিনেমার গানগুলো দেখি আর মুগ্ধ হই। কবরী, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। করোনার কাছে হার মেনে চলে গেলেন না ফেরার দেশে…
নদী বাঁকা জানি, চাঁদ বাঁকা জানি থেকে শুরু করে..
সে যে কেন এলো না কিছু ভাল লাগে না, এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাব..
হৈ হৈ রঙিলা মনে যে লাগে এত রঙ, নদী তাই ঢেউয়ে টলমল,
আমি তোমার বঁধু, তুমি আমার স্বামী, খোদার পরে তোমায় আমি বড় বলে জানি।
সব সখিরে পাড় করিতে নেব আনা আনা…
প্রেমেরও নাম বেদনা, সে কথা বুঝিনি আগে..
কত্তো কত্তো গানের সাথে পর্দায় মিলেমিশে একাকার হয়ে আছেন কবরী।
নাম লিখিয়েছিলেন রাজনীতিতেও। তবুও চলচ্চিত্রকে ভুলেননি নির্মাণের সাথে জড়িত রেখেছিলেন নিজেকে। কিন্তু করোনার কাছে হার মেনে না ফেরার দেশে চলে গেলেন, চিরদিনের মিষ্টি মেয়ে কবরী, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সঙ্গীত, সিনেমা যতদিন থাকবে ততোদিন তিনিও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
লিখে গেছেন আত্মজীবনী “স্মৃতিটুকো থাক” প্রিয় কবরী আপনার স্মৃতিটুকো থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
মূল নাম, মিনা পাল৷ বাবা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল৷ ছিলেন চট্টগ্রামের মেয়ে। সুভাষ দত্তের সুতরাং সিনেমায় কবরী হয়ে আত্মপ্রকাশ, প্রথম জীবনে চিত্ত চৌধুরীকে বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে
ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত পরিবারের সদস্য গোলাম সারোয়ারকে। তখন থেকেই তিনি কবরী সারোয়ার নামে পরিচিত হয়ে উঠেন।
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক
Advertisement