বিমানে বেড়েছে ইন-ফ্লাইট এরেষ্ট, যাত্রীদের ব্যবহার নিয়েও আছে প্রশ্ন

বাংলাদেশ বিমান লন্ডন ফ্লাইট হালচাল – শেষ

আ স ম মাসুম:পৃথিবীর অন্যান্য দেশের এয়ারলাইন্সে উঠলে ভিন্ন ভাষাভাষীর কেবিন ক্রুদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করেন। সেই একই যাত্রী যখন বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমন করে থাকেন তখন কেবিন ক্রুদের সাথের যাত্রীদের ব্যবহারের তফাত রাত-দিন! কথাগুলো অনেকটা আফসোসের সাথে বলছিলেন ব্রিটেনে টেলিভিশনে কর্মরত হাবিবুর রহমান নামে একজন মিডিয়া কর্মীর।

তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে কথাগুলো বলছিলেন। এই প্রতিবেদকও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমন করে দেখেছেন ব্রিটেন থেকে সিলেটগামী যাত্রীদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক খুব খারাপভাবে বিমানের ক্রুদের সাথে ব্যবহার করে থাকেন।

মুলত বাংলা ভাষাভাষী দেখেই ক্রুদের সাথে এমন ব্যবহার করা হয়।

বয়স্করা যেমন বাজে ব্যবহার করে থাকেন তেমনি তরুন প্রজন্ম যাদের অনেকেই মাদকাশক্ত থাকেন তাদের ব্যবহার আরো খারাপ।

এজন্য হিথ্রো বিমানবন্দরে ইন-ফ্লাইট এরেষ্ট এর সংখ্যা বাংলাদেশ বিমানে উল্লেখযোগ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিমান ব্রিটেনে কর্মরত একজন কর্মকর্তা জানান, মাসে কমপক্ষে ১০টিরও বেশি ইন ফ্লাইট এরেষ্টের ঘটনা ঘটে থাকে বাংলাদেশ বিমানে। জুলাই হলিডে বা ডিসেম্বর হলিডে’র পিক সিজনে সেটার সংখ্যা মাসে ১৫টির বেশী হয়ে থাকে।

ঘটনার গুরুত্ব অনুসারে কিছু কিছু ঘটনা কোর্ট পর্যন্ত যায়। এমন ৩টি কেইস সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমান ব্রিটেনের কোর্টে গিয়ে জয়লাভ করেছে বলে জানান সেই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ বিমান ব্রিটেন কান্ট্রি ম্যানাজার শফিকুল ইসলামের ব্যাক্তিগত ফোনে বৃহস্পতিবার ব্রিটেন সময় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

মোবাইলে ভয়েস ম্যাসেজ ও টেক্সট রাখার পরও তিনি ব্যাক করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লন্ডন-সিলেট-লন্ডন ফ্লাইটে নিয়মিত আসা একজন কেবিন ক্রু বলেন, আকর্ষনীয় সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্ত্বেও তরুন কেবিন ক্রু লন্ডন-সিলেট-লন্ডন ফ্লাইটে আসতে চান না শুধুমাত্র যাত্রীদের ব্যবহারের কারনে।
মহিলা কেবিন ক্রু একজন জানান, বিমানের ফ্লাইট মানেই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য ও নানা ধরনের কটুক্তির শিকার হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে, আনর্জাতিক পর্যায়ে ট্রেনিং নিয়েই আমরা সেই মোতাবেক চেষ্টা করি যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে। অনেক সময় বিমানের পলিসিগত বিষয়ের কারনে হয়তো যাত্রীদের সেবা সীমাবদ্ধতা থাকে। তিনি আরো বলেন, ধরেন ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট যদি কাজ না করে বা নষ্ট থাকে সেটা আমরা বিমানের সংস্লিষ্ট বিভাগে জানাই। তারা হয়তো তাদের নিয়মতান্ত্রিক জটিলতার কারনে ঠিক করতে সময় নেয়। আবার খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমরা সংস্লিষ্ট বিভাগে এ বিষয় নিয়ে কথা বলি। যাত্রীদের বেশির ভাগই উড্ডয়ন ও অবতরনের সময় মোবাইল ব্যবহার না করা, সিট বেল্ট বাধা, অবতরনের পরপরই বিমান না থামার আগেই লাগেজ সিট ছেড়ে উঠে পড়া ইত্যাদি নিয়ে নানা ধরনের বিষয় নিয়েই ঝামেলা হয়। অনেকে টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে বাচ্চাদের স্যানিটারী ন্যাপকিন, পান খাওয়ার পর উচ্ছিষ্ট অংশ ইত্যাদি দিয়ে টয়লেট জ্যাম করে ফেলেন। অযু করার জন্য বিমানে মাটির ঢেলা দিয়ে তায়াম্মুম করার ব্যবস্থা থাকলেও দেখা যায় অনেকেই টয়লেটের বেসিনে পানি দিয়ে অযু করতে গিয়ে পুরো টয়লেট পানিতে ভাসিয়ে ফেলেন। এইসব বিভিন্ন কারনে যাত্রীদের সাথে কেবিন ক্রু দের ব্যবহারের ফারাক বিস্তর।
তিনি আফসোস করে বলেন, একই প্যাসেন্জার যখন অন্য দেশের বিমানে উঠেন তখন কিন্তু সব কিছু নিয়ম মেনেই চলেন। নিজের দেশের বিমানে উঠলে যেখানে সবকিছুর প্রতি যত্নশীল হওয়ার কথা সেখানে দেখা যায় উল্টোটা।

Advertisement