বিয়ানীবাজারে করোনা আক্রান্তদের সহায়তায় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ : প্রাণের টানে প্রাণের সনে

               :: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী ::

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষ করোনা আক্রান্তের ভয়ের মধ্যে রয়েছেন  তবে এই ভয় যেন একটু ভিন্ন রকমের  আক্রান্ত না হবার জন্য যেমন ক্যাম্পেইন চলছে, তেমনি আক্রান্তদের উপর রয়েছে এক মারাত্মক ঘৃণা কিংবা ক্ষোভ আর সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মানুষ বিভিন্ন ভাবে করছেন  যেমন হাসপাতালে স্বজনের লাশ ফেলে যাওয়া, অসুস্থ স্বজনকে মধ্যরাতে জঙ্গলে ফেলে যাওয়া কিংবা আক্রান্তের ভয়ে মৃতের লাশ এলাকায় দাফনে বাধা দেয়া ইত্যাদি এমনকি অসুস্থ ব্যাক্তি কিংবা তার পরিবারকে গালিগালাজ করা, বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং হুমকিধমকি দেয়া  প্রতিদিনই আমরা এসব খবর পড়তে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাছাড়াও রাস্তায় বাঁশ ফেলে করোনা ভাইরাস আটকানোর খবর আমরা পাই আমার মনে হয় করোনা সম্পর্কে মারাত্মক একটি নেতিবাচক ক্যাম্পেইন এবং আমাদের অজ্ঞতা এই দুটোর উপর ভিত্তি করে এসব ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে আমরা ভুলে যাই আগামী কাল যদি আমি আক্রান্ত হই, তাহলে আমার কিংবা আমার পরিবারের পরিণতি কি হবে? আমরা ভুলে যাই, করোনা একটি রোগ এবং এই রোগে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে করোনা ভাইরাস থেকে সেরে উঠার একমাত্ৰ উপায় মানসিক শক্তি আর আমরা সবাই মিলে আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা পরিবারের সাথে যে আচরণ করি তা হলো মরার আগেই তাদের মেরে ফেলি

ফেসবুক মেসেঞ্জারে এই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা প্রতিদিন বন্ধুবান্ধব একে অন্যের সাথে আলাপ করি  আর এই সূত্ৰ ধরে আমরা চিন্তা করেছি করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের নিয়ে আমরা একটি পজিটিভ ক্যাম্পেইন করবো  অর্থা আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা পরিবারের পাশে দাঁড়াবো আর সেই সাথে আমাদের চারপাশের মানুষদের একটি বার্তা দেয়াকরোনা কোন অভিশাপ নয়, এটি একটি রোগ এই রোগ থেকে আপনিও মুক্ত নন, সুতরাং আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা পরিবারের প্রতি সদয় হন এবং তাদের পাশে দাঁড়ান প্রাণের টানে প্রাণের সনে এই স্লোগান নিয়ে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা পরিবারের জরুরি খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদানে সচেষ্ট থাকবে তাছাড়া মানসিক শক্তি প্রদানে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং পরিবারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে সর্বোপরি সামাজিকভাবে করোনা আক্রান্ত কোন ব্যক্তি এবং পরিবার যাতে বৈষম্য, নির্যাতন হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে

প্রথমে ফেসবুকে মানুষের আচরণ দেখে মনে হয়েছিলো হয়তো সবাই এই সমান মত পোষণ করে, কিন্তু আশ্চর্যজনক হলে সত্য কথা বলে মনে হলো অধিকাংশ মানুষই আমাদের সাথে একমত খুব স্বল্প সময়ে বিয়ানীবাজারের ১১টি ইউনিয় নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি ভলান্টিয়ার নেটওয়ার্ক আর এই নেটওয়ার্কের সাথে রয়েছেন আমাদেরই বন্ধুমহলের সদস্যরা ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু আমিনুল এতো স্বল্প সময়ে লিফলেট বানানো থেকে শুরু করে পুরো থানা জুড়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করার জন্য আর সেই সাথে কৃতজ্ঞতা সকল সেচ্ছসেবী যারা আর্ত মানবতার সেবায় সাড়া দিয়ে প্রায় অর্ধ শত স্বেচ্ছাসেবী ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছেন এবং এই মহান কাজে নিজেদের শরিক করেছেন আর যাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা ছাড়া এই মহান কাজ সম্ভব হতোনা পঞ্চখন্ডের সেই সকল মানব হিতৈষী বন্ধু মহলের অলংকার যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, মধ্যপ্রাচ্য এবং গোটা ইউরোপজুড়ে যারা মনে প্রাণে ভালোবাসেন প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে বাংলাদেশ হাসলে তারা হাসেন আর বাংলাদেশ কাঁদলে তারা কাঁদেন জন দিয়ে শুরু করা এই গ্রূপের সদস্য এখন শতাধিক সবার নাম লিখে শেষ করা যাবে না সবার প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা সমাজ বদলে আপনাদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ অবশ্যই মানুষ কৃতজ্ঞতা চিত্তে গ্রহণ স্মরণ করবে মহান আল্লাহ আপনাদের এই উদ্যোগ কবুল করুন

লেখক:
ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
কন্ট্রিবিউটর, ব্রিট বাংলা২৪ এবং প্রিন্সিপাল সলিসিটার, কেসি সলিসিটর্স, লন্ডন।

Advertisement