বিশেষ শিল্প ঋণে সুদ সিঙ্গেল ডিজিট

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ঢালাওভাবে নয়, শুধু বিশেষ শিল্প ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে (এক অঙ্ক) নামিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ যেসব শিল্পে বিনিয়োগ হলে অর্থনীতিতে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কেবল সে ক্ষেত্রেই বিশেষ শিল্পঋণ হিসেবে সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করা হবে।

এমন সুপারিশ করে ঋণের সুদ হার কমানো সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আজ গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে জমা দেয়া হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এছাড়া সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার ব্যাপারে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে কমিটির প্রতিবেদনে।

গত রোববার রাতে ঋণের সুদের হার কমানোর বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একইদিন দুপুরে এ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত হওয়ার পরও ভাষাগত কিছু পরিবর্তন আনার জন্য তা জমা দেয়ার সময় একদিন পিছিয়ে দেয়া হয়। ফলে সুদহার কমানোর সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদনটি আজ বুধবার গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, সুদহার কমানোর সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত। এটি আজ বা কাল গভর্নরের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা মাথায় রেখেই সুপারিশ জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘নয়-ছয় ফর্মুলা’ ভুলে যান। এখন থেকে ব্যাংকিং খাতে আমানতে ৬ এবং ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের ফর্মুলা থাকবে না। নতুন পদ্ধতিতে সুদের হার কমানো হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক কত শতাংশে আমানত নিল তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবে এখানে ব্যবসা করতে হলে শুধু শিল্পঋণে সুদের হার ৯ শতাংশের বেশি এক পয়সাও নেয়া যাবে না। এটার ভিত্তিতে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে কোন কোন ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটের নির্দেশনা অমান্য করেছে তা খুঁজে বের করতে সব ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ৮ ব্যাংক ছাড়া বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকই কোনো না কোনোভাবে সিঙ্গেল ডিজিটের নির্দেশনা অমান্য করার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক সূত্র জানায়, শুধু শিল্পঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে চলতি মূলধন ঋণ, প্রজেক্ট লোনসহ শিল্প খাতের বড় ঋণগুলো থাকবে। তবে ভোক্তা ঋণ এর আওতায় পড়বে না। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে বা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ৭ বার এবং বর্তমান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ১০ বার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও বেসরকারি ব্যাংকগুলো তা করছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যানদের ডেকে এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সুদের হার কমানোর শর্তে ব্যাংকগুলোকে ৫ ধরনের বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এসব সুবিধা নিয়েও তারা সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানো হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ মে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। পরে সে নির্দেশ অনুযায়ী তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ঋণের সুদের হার কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়া হয়। এর আলোকে অর্থমন্ত্রী চিঠি দেন বাংলাদেশ ব্যাংককে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য তাদের বার্তা দেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বার্তা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদও ব্যাংকের পরিচালকদের দেন। এর আলোকে গত বছরের ২০ জুন বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভায় সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশে এবং ছয় মাস মেয়াদি আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়। সুদের এই হার তারা গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা জানায়। কিন্তু ১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত সরকারি চার ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই কার্যকর করেনি। পরে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংকই তা বাস্তবায়ন করেনি।

Advertisement