বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে

বর্তমানে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সোমবার (১২ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা’র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাব, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন হুমকির উপাদান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সাম্প্রতি শান্তিরক্ষীদের প্রাণহানির সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। এযাবৎ বাংলাদেশি ১৫৮ জন শান্তিরক্ষী প্রাণোৎসর্গ করেছেন এবং ২৩৭ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে আগামী দিনের নতুন সংকটগুলো মোকাবিলায় শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করা এখন সময়ের দাবি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা’য় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সাম্প্রতিক সময়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ঘটনা অংশগ্রহণকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের ভবিষ্যত শান্তিরক্ষীরা সুপ্রশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে। এই অনুশীলনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে অত্যন্ত নিখুঁত এবং সফলভাবে এই অনুশীলনটি আয়োজন করার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। জাতির পিতার শান্তিদর্শন প্রতিষ্ঠায় এই বহুজাতিক অনুশীলনটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

‘যেকোনো দেশের জাতীয় মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী অপরিহার্য। তেমনি, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা যাচাইয়ে নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই। জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি অত্যাধুনিক সামরিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আদর্শকে ধারণ করে তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে আমরা ২০২০-২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। পাশাপাশি সমগ্র বাঙালি জাতি গৌরবের সঙ্গে উদযাপন করছে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিশ্বের ১১৬টি দেশের নেতারা ভিডিও এবং লিখিত অভিনন্দনবার্তা প্রেরণ করেছেন। এসব বার্তায় অত্র অঞ্চলসহ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি মিলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে আমরা আমাদের তিন বাহিনীর আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছি। আমাদের সামরিক বাহিনীতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তির সংযোজন করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিরসনে আমরা ‘শূন্য সহনশীলতার নীতি’ গ্রহণ করেছি। মহামারির সময়েও ৫.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ নারী শান্তিরক্ষীসহ ১ লাখ ৭৫ হাজারের অধিক বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী ৫টি মহাদেশের ৪০টি দেশে ৫৪টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে ৭ হাজারের অধিক বাংলাদেশি সেনা ও পুলিশ সদস্য ১০টি মিশনে শান্তিরক্ষার উদ্দেশ্যে মোতায়েন আছে। আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। একারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।এই অনুশীলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত, ভুটান ও শ্রীলংকা থেকে আসা অংশগ্রহণকারী সামরিক সদস্যদের আন্তরিক অভিবাদন জানান প্রধানমন্ত্রী। স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সৌদি আরব, কুয়েত এবং সিঙ্গাপুর থেকে আসা আমন্ত্রিত পর্যবেক্ষকদের।

Advertisement