ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটির মহাসচিব টেড্রোনস আধানম গেব্রিয়াসেস বলেন, ‘মার্কিন সরকার ও মানুষের সহায়তায় ডব্লিউএইচও বিশ্বের বহু গরিব ও সংবেদনশীল মানুষের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করতে পারবে।’
ডব্লিউএইচও সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক- ডব্লিউএইচও কি? : এটি জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা। বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্যের জন্য কাজ করে থাকে। রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করে ডব্লিউএইচও। এর সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।
বিশ্বব্যাপী সংস্থাটির ছয়টি আধা-স্বায়ত্তশাসিত আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। সেগুলো হল- আফ্রিকা, পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল।
ডব্লিউএইচও’র ১৬০টি মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় রয়েছে। কিভাবে কাজ করে? : ডব্লিউএইচও’র ১৯৪ সদস্যবিশিষ্ট রাষ্ট্রের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সংস্থাটির গভর্নিং বডি বিশ্ব স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলি (ডব্লিউএইচএ) নির্বাচিত হয়।
এটি ৩৪ জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত হয়। ডব্লিউএইচএ বার্ষিক সম্মেলন এবং মহাপরিচালক নির্বাচন, লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ, বাজেট এবং কার্যক্রম অনুমোদিত করার জন্য দায়বদ্ধ। এর বর্তমান মহাপরিচালক টেড্রোনস আধানম ইথিওপিয়ার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিশ্বজুড়ে সংস্থাটির সাত হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে। সংস্থাটি কি করেছে : ৭০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসে সংস্থাটি মহামারী ও স্বাস্থ্য ইস্যুতে বহু জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।
এটি গুটিবসন্ত, পোলিও এবং ইবোলা নির্মূলে ভূমিকা পালন করেছে। ইবোলার ভ্যাকসিন তৈরিতেও ডব্লিউিইচও’র ভূমিকা অতুলনীয়। কারা ফান্ড দেয়? : ২০১৯ সালে মোট অনুদানের পরিমাণ ছিল ৫.৬২ বিলিয়ন ডলার।
সংস্থাটির মূল আর্থিক জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র দেয় ৫৫৩.১ মিলিয়ন ডলার, যা মোট আয়ের ১৪.৬৭ শতাংশ। এরপরই বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন দেয় ৯.৭৬ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬৭.৭ মিলিয়ন ডলার।
গাবি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স দেয় ৮.৩৯ শতাংশ। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান রয়েছে যথাক্রমে ব্রিটেন ৭.৭৯ শতাংশ, ১১ মিলিয়ন এবং জার্মানি ৫.৬৮ শতাংশ, ১৫ মিলিয়ন।
ট্রাম্প কেন অর্থায়ন বন্ধ করলেন : করোনা মহামারী ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে জোর তৎপরতা চলছে। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি ডব্লিউএইচওর বিরুদ্ধে চীনের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা এবং সত্য ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এককভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে সবচেয়ে বড় অঙ্কের অর্থায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর এ তহবিলে যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ৪০ কোটি ডলার; যা ছিল সংস্থাটির বার্ষিক বাজেটের প্রায় ১৫ শতাংশ।
এছাড়া করোনা মোকাবেলায় সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ডলার চেয়েছিল। ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের অভিযোগ, মানুষে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ রোগের বিষয়ে সতর্ক করতে বিলম্ব করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের পক্ষ থেকে যেখান থেকে ভাইরাসের উৎপত্তি সেখানে বিশেষজ্ঞ পাঠানো হয়নি এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।
তাদের আরও অভিযোগ, ডব্লিউএইচও ত্বরিত সিদ্ধান্ত না নিয়ে চীনের সঙ্গে আমাদের সীমানা বন্ধ করার আগের দিনই জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছিল। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ডব্লিউএইচওকে চীনঘেঁষা তকমা দিয়েছিলেন।
এদিকে জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা একমত যে, করোনা মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিক্রিয়া ভালোই ছিল। ২০১৪ সালের ইবোলা প্রতিরোধের সময় তৎকালীন মহাসচিব মার্গারেট চ্যানের তুলনায় বর্তমান মহাসচিবের কর্মকাণ্ড ভালো ছিল।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-১৯ মোকাবেলায় যা করেছে তার তুলনায় ভালো করেছে ডব্লিউএইচও। গত ৫ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কতা জারি করে।