বেঁচে থাকুন মুহিব ভাই যুগযুগ ধরে….

।। এম.হাসানুল হক উজ্জ্বল ।।

ওলিউর রহমান বিয়ানীবাজার পৌরসভার বাসিন্দা। একখন্ড জমি ক্রয় করেছেন। আত্মীয়/স্বজন সকলে জমি ক্রয়ের টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু জমি টুকু রেজিষ্ট্রি করার টাকা নাই। একদিন ওলিউর রহমান বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়রের অফিসে সহযোগিতার জন্য এলেন। ওই দিন আমিও সেখানে বসা ছিলাম। জমি রেজিষ্ট্রির জন্য সাহায্যের আকুতি জানালেন। মেয়র হ্যা সুচক জবাব দিয়ে আমার দিকে তাঁকিয়ে রইলেন। কিন্তু মেয়রের অফিস যে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার জন্য কোন ফান্ড নেই।। তা কিভাবে বলবেন ওলিউর রহমানকে। তাই বিকল্প চিন্তা করতে হবে। আমাকে ইশারা করলেন। সাথে সাথে চাঁদাবাজের ভূমিকায় অবতির্ন হলাম। কাউন্সিলর রোশনা বেগমকে বললাম ৫ হাজার টাকা দিতে। তিনি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পৌছে দিলেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রিফাতকে বললাম ৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য। রিফাতও দিয়ে দিলো। ওই দিন এ রকম করে ২৭ হাজার টাকা যোগাড় করলাম। কিন্তু এই টাকায় জমি রেজিষ্ট্রি করা সম্ভব নয়। তাই সেখানে বসেই মাথায় আসলো মুহিব ভাইয়ের কথা।

মুহিব ভাই কে? অনেকে জানার আগ্রহ করছেন। তাই না? তিনি আর কেউ নন। তিনি বিয়ানীবাজারবাসীর বন্ধু। মাথিউরা ইউনিয়নের পুরুষপাল গ্রামের বাসিন্দা। বসবাস করেন যুক্তরাজ্যে। বিয়ানীবাজার ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ দিন। তার হাত ধরে বিয়ানীবাজার উপজেলার অসংখ্য অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটেছিল। তিনি বর্তমানে জালালাবাদ এসোসিয়েসনের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিজ দেশের গরীব অসহায় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে।

মেয়র সাহেবকে বললাম মুহিব ভাইয়ের কথা। তিনিও প্রবাসী। মুহিব ভাই’র বর্তমান অবস্থার কথা জানেন। বললেন ‘ মুহিব ভাই ঋণে চেপ্টা’। আমি মেয়র সাহেবের কথা শুনে উনাকে কিছু না বলে উঠে গেলাম।

রাতে মুহিব ভাইকে ফোন করলাম। তিনি তখন ইতালীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করতে গেছেন। কথা হলো অনেকক্ষন। বললাম আবদারের কথা। কোন কিছু চিন্তা না করেই বললেন যত টাকা লাগে দিমু। কাম চাল্ইায়া যাও। পরিমান কত জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেন নি।
আজ ফোন করে বললেন বুধবারে জমিটি রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে দিও। টাকা কত লাগে ? বললাম ৩৫ হাজার টাকা। বললেন মঙ্গলবার সকালে হাতে পাইবায়।

মুহিব ভাই আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখের। অনেক স্নেহ করেন। আমার কোন আবদার আজও ফিরিয়ে দেন নি।

ক্যান্সার আক্রান্ত রোকনের সাহায্যের জন্য তার কাছে আমার প্রথম আবদার ছিল। লন্ডনে গিয়ে দেলওয়ার ভাই, মামুন ভাই সকলকে বলি। সকলের সহযোগিতায় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার উপরে বিয়ানীবাজারের প্রবাসী ভাইয়েরাসহ বিভিন্নজন সাহায্যে করেছেন। রোকন ব্রুনমেরু ট্রান্সফার করেছে। বাঁচার আকুতিতে মুহিব ভাইয়ের নেতৃত্বে বিয়ানীবাজার ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে সাড়া দিয়েছিল বলেই তার চিকিৎসা বিদেশে করা সম্ভব হয়েছে। তাও উন্নত হাসপাতালে। যতদিন রোকনের হায়াত ছিল ততদিন আল্লাহ তাকে বাচিয়ে রেখেছিলেন।

রোকন পরপারে চলে গেলেও রোকনের পরিবারের সাথে মুহিব ভাইয়ের সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সময় সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পরিবারের প্রতি।

একই ভাবে খাসা এলাকার এক যুবক আলমগীরের চিকিৎসার সাহায্যের জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম। ওই দিন উপজেলায় একটি মেডিকেল ক্যাম্প ছিল। ট্রাস্টের সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি আমার সাথে তার আলমগীরের বাড়ীতে যান এবং সহায়তার আশ্বাস দিয়ে আসেন। পরবর্তীতে বিয়ানীবাজার ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট তাকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে।

সবশেষে আগামী বুধবার ওলিউর রহমানের জমি রেজিষ্ট্রি হবে। পরবর্তীতে গৃহ নির্মাণের প্রয়োজন হবে। মুহিব ভাইরা ওলিউর রহমানের গৃহ নির্মাণেও পিছপা হবে না তা জানি।

তাই গরীবের কল্যাণে/সমাজের কল্যাণে/ মানুষ মানুষের জন্য এই নিদর্শন সমাজে যুগ যুগ ধরে রাখতে মুহিব ভাইদের মতো নিরব দানবীর বেঁচে থাকা দরকার। আল্লাহ মুহিব ভাইসহ পরোপকারীদের নেক হায়াত দান করুন। আমীন।

Advertisement