ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যর যাতে হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে মহামারী সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মেসেজগুলো মুছে ফেলতে না পারেন,সেজন্য আইনি লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন একদল আইনজীবী।যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট রোববার এক প্রতিবেদনে বলেছে,ব্রিটিশ আইনজীবী দলটির ওই চেষ্টা সফল হলে মন্ত্রীরা টেক্সট মেসেজে তাদের কথাবার্তা সংরক্ষণ করতে বাধ্য হবেন,কারণ তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের সব ধরনের দাপ্তরিক কাজের তথ্য যাতে পাওয়া যায়,তা নিশ্চিত করাও তাদের দায়িত্ব।প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ফক্সগ্লোভ নামে আইনজীবীদের ওই সংগঠনটি একটি উকিল নোটিস তৈরি করেছে । সরকারের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা তাদের দাপ্তরিক যোগাযোগের কাজও হেয়াটসঅ্যাপ,সিগন্যাল বা মোবাইলের টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে সারছেন জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে।
ফক্সগ্লোভের পরিচালক মার্থা ডার্ক বলেন, কাজগুলো যেভাবে হওয়া উচিত, সেজন্য একটি যথাযথ ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত সরকারের নেই, আর এটা স্পষ্টতঃ ‘আইনের লঙ্ঘন’।আমরা এখন নজিরবিহীন এক সঙ্কটের মধ্যে আছি। এ অবস্থায় সরকারের কাজে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের হেয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, টেক্সট মেসেজ, সিগন্যাল মেসেজ অবশ্যই পাবলিক রেকর্ডস অ্যাক্ট অনুযায়ী সংরক্ষণ করা দরকার। কিন্তু সেটা করার জন্য সরকারের কোনো ব্যবস্থাপনা এখনও নেই।ফলে এখন সবার রেকর্ড সংরক্ষণ ছাড়া স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প দেখছেন না মার্থা ডার্ক।ব্রিটিশ ট্রেজারির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি সম্প্রতি জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে লেনদেন হওয়া কিছু মেসেজ তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এরপরই ফক্সগ্লোভের আইনজীবীদের এই পদক্ষেপের খবর আসে।তথ্য অধিকার আইনে করা এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছিল, ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে ১২টি মেসেজে কী কথা হয়েছিল, ট্রেজারির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি তা জানাতে পারেননি, কারণ দুর্ঘটনাক্রমে ভুল পাসওয়ার্ড দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার ফোন রিসেট করতে হয়েছে।ইনডিপেনডেন্ট লিখেছে, আইনজীবীদের এই উদ্যোগ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কিছু সদস্যেরও সমর্থন পাচ্ছে।
তারা বলছেন,লকডাউনের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রীদের মধ্যে যেসব মেসেজ চালাচালি হয়েছে,সেগুলো যদি এখন মুছে ফেলা হয়,তাহলে সরকারের সিদ্ধান্তের ভুল নিয়ে পরে কোনো তদন্ত শুরু হলে প্রমাণের অভাবে তা মুখ থুবড়ে পড়বে।ফক্সগ্লোভের উদ্যোগকে সমর্থন জানানো ব্রিটিশ এমপিদের একজন ক্যারোলিন লুকাস বলেন,গত কিছুদিনে সরকারের কিছু বড় বড় ভুলের তথ্য বেরিয়ে এসেছে, যেসব ভুল মানুষের মৃত্যু ডেকে এনেছে। ভারতকে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যোগ করতে বিলম্বের বিষয়টি সেরকম একটি ভুল,যার ফলে ভারতে উদ্ভূত করোনাভাইরাসের ধরনটি যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের মধ্যে যে যোগাযোগগুলো হয়েছে, সেসব পূর্ণাঙ্গভাবে জানতে হবে কোনো ধরনের তদন্ত করতে গেলে।কোথায় সমস্যা ছিল তা বুঝতে এ বিষয়ে মন্ত্রীদের এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে যেসব টেক্সট মেসেজ চালাচালি হয়েছে,সেগুলোও দেখতে হবে।আর তা করা না গেলে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগও আমরা হারাব।