ব্রিটেনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই সেপ্টেম্বর থেকে খুঁলছে সব স্কুল

মো: রেজাউল করিম মৃধা ॥ করোনাভাইরস মহামারির কারণে মার্চ থেকে ব্রিটেনের সব স্কুল বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর যে কোন মূল্যেই স্কুল খুলতে বদ্ধ পরিকর সরকার। ইংল্যান্ডে সেপ্টেম্বর থেকে চালু হতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ। এনিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে ভয় ও সংশয় কাজ করছে।

ব্রিটেনের দি ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়ন বলছে, সরকারের প্ল্যান বি অর্থাৎ স্কুলে শিশুদের মধ্যে করোনা সংক্রমন ঠেকাতে সরকারের বিকল্প পরিকল্পনা খুবই দূর্বল।  স্কুলে আরো স্টাফ নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত শিক্ষার জায়গা, যদি করোনার সংক্রমন বৃদ্ধি পায় সেক্ষেত্রে কী করা উচিত সে সম্পর্কে আরও স্পষ্ট বক্তব্য দাবী করেছে ইউনিয়ন।

তবে ভিন্নমত জানিয়েছেন সরকারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ‍অধ্যাপক ক্রিস হুইটি। তিনি বলছেন, শিশুরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে শিশুরা স্কুলে না গেলে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে শিশুদের মারা যাওয়ার আশঙ্কা অবিশ্বাস্য রকম কম। কিন্তু স্কুলে না যাওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদে তারা শরীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির শিকার হবে।
করোনাভাইরাস মহামারীতে ইউরোপে সবচাইতে বেশি মৃত্যুবরনকারী দেশের মধ্যে একটি দেশ যুক্তরাজ্য। এখনো প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ভাইরাসে সংক্রমিত। মারা গেছেন প্রায় ৪৭ হাজার। এটা সরকারী হিসেব। আর অফিস ফর ন্যাশনাল স্টেটিসটিকসের হিসেবে প্রায় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন ব্রিটেনে যাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনা ভাইরাস উল্লেখ রয়েছে ডেথ সার্টিফিকেটে।

করোনাভাইরস বিস্তার রোধে অন্যান্য দেশের মত ব্রিটেনে গত মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের লাখ লাখ শিশু সেপ্টেম্বরে স্কুলে ফেরার অপেক্ষায় আছে।
অধ্যাপক হুইটি বলেন, আরও অন্তত নয় মাস আমাদেরকে কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে। এর মধ্যে যদি কোনও ভেকসিন পাওয়া না যায় তবে আগামী শীতের আগে করোনার ভয়াবহতা বেড়ে যেতে পারে।

ব্রিটেনে সেপ্টেম্বর থেকে সব বয়সের, সব বর্ষের এবং সব গ্রুপের শিক্ষার্থীদের ‘ফুল-টাইম’ ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্কটল্যান্ডে এরই মধ্যে স্কুল খুলা হয়েছে।

ব্রিটেনের এডুকেশন সেক্রেটারি গ্যাভিন আলেকজান্ডার উলিয়ামসন বলেন,”শিক্ষা গুরুত্ব সবার আগে । যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। অনেক শিশু স্কুলে যাওয়ার চেয়ে স্কুলে না যাওয়ার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

এছাড়া যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বেই এখন একটি বিষয় স্পষ্ট। তা হল, শিশুরা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে না বা তাদের খুব একটা হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না।”
যেহেতু কোভিড-১৯ এর কোনো কার্যকর ভেকসিন এখনো হাতে পাওয়া যায়নি তাই এখন পর্যন্ত ‘ঝুঁকি মুক্ত কোনো পথ’ নেই। যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা কর্মকর্তারা তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের স্কুল খোলার ঝুঁকি এবং লাভ উভয়ের গুরুত্ব বোঝার পরামর্শ দিয়েছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের পর দিন স্কুলে না যাওয়ায় শিশুদের দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভোগার ঝুঁকি অনেক বেশি।
অধ্যাপক হুইটি বলেন, ‘‘সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে যে কয়টি শিশু মারা গেছে তাদের প্রায় সবাই আগে থেকে কোনও না কোনও জটিল রোগে ভুগছিল।”
যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ১৯ বছরের কম বয়সের ১০ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ২০ বা তার অধিক বয়সে মোট মৃত্যু ৪৬,৭২৫।

Advertisement