ব্রিটবাংলা রিপোর্ট : ধর্মনেতার ছদ্মবেশী এক চ্যারিটি বসের নেতৃত্বে ও তার স্ত্রী-কন্যার সহায়তায় গড়ে ওঠা একটি মর্টগেজ জালিয়াত চক্রকে ৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাউন্ড ফেরত দেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত। দীর্ঘ, জটিল প্রতারণার মাধ্যমে ১৫ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পর বিপুল পরিমাণ এই অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য নয়জন বিবাদীকে আদালতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বে ছিলেন ভণ্ড আধ্যাত্মিক নেতা মেহবুব আখতার। পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ফেন্টনের ভুয়া এই বিশিষ্ট স্বঘোষিত নেতা পীর পান্ডারিম্যান নামেও পরিচিত। ৬১ বছর বয়সী এই চ্যারিটি বস দারবার ইউনিক সেন্টার নামে স্টউক-অন-ট্রেন্টের একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি জালিয়াতি এবং কর ফাঁকি ধামাচাপা দিতে “আধ্যাত্মিক গাইড” হিসাবে নিজের ভুয়া পরিচয়ে গড়ে নিয়েছেন তিনি।
বার্মিংহামের ক্রাউন কোর্ট-এর শুনানিতে জানা যায়, ৪১টি বাই-টু-লেট প্রপার্টির পোর্টফলিয়ো গঠন করার জন্য পান্ডারিম্যান তার অনুসারীদের অনুদানের অর্থ ব্যবহার করেছেন। মরটগেজ-এর আবেদনের সময় নিজের নাম আড়াল করতে তিনি কাগজপত্রে স্ত্রী, কন্যা ও ভাতিজার নাম ব্যবহার করেছেন। তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড গোপন করতে সহায়তা করেছে ফেন্টনের দরবার ইউনিক সেন্টার। আর এসব কাজে তাকে সহায়তা করেছেন তার ডান হাত হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ জাব্বির হোসেন। বিশাল এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন তিনি।
পান্ডারিম্যানের স্ত্রী খাদিজা আক্তার এবং কন্যা রুশবম্মানী আখতারও ওই গ্যাঙের অন্তর্ভুক্ত। ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ড জালিয়াতির দায়ে ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে তাদের জেইল হয়েছিল বলে জানা যায়।



তবে এখন জানা যায় ঐ জালিয়াতি থেকে হাতিয়ে নেওয়া সর্বমোট অর্থ ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ডের চেয়ে তিনগুণ বেশি। অপরাধের শুনানিতে এ সপ্তাহে জানা যায় গ্যাঙটি আসলে ১৫ মিলিয়ন ৫শ’ ৬৯ হাজার ৫শ’ ৫৪ পাউন্ড অর্থ বাগিয়ে নিয়েছে। জটিল এই জালিয়াতির মাধ্যমে মেয়ারের ফারমান ক্লোজের পান্ডারিম্যান এবং লাইটউডের ক্যাসল্টন রোডের জাবির হুসসাইন – শুধু এই দুজনই আয় করেছেন ১০ দশমিক ৯ মিলিয়ন পাউন্ড।
জালিয়াত চক্রের নয়জন বিবাদীকে ৪ মিলিয়ন ৩শ’ ৪৬ হাজার ৮শ’ ৫৩ পাউন্ড ফেরত দেওয়ার আদেশ দিয়েছে বার্মিংহামের ক্রাউন কোর্ট। ধারণা করা হচ্ছে, অপরাধের অর্থ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের পক্ষ থেকে কোন একটি একক মকদ্দমা থেকে এটিই সবচেয়ে বড় অংকের অর্থ আদায়ের আদেশ।
হার ম্যাজেস্টিস রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টমসকে (এইচএমারসি) প্রতারণার দায়ে এবং মর্টগেজ জালিয়াতির ৮টি গুরুতর ষড়যন্ত্রের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে ১৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন পান্ডারিম্যান। পরে লন্ডনের আদালতে আপিলের মাধ্যমে তার সাজা কমিয়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড করা হয়। তার কমিউনিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পান্ডারিম্যান একজন ক্যারিজম্যাটিক ব্যক্তি এবং দরবার ইউনিক সেন্টারের প্রধান।
২০১৪ সালে চ্যারিটি কমিশনে নিবন্ধিত এই সেন্টারটি “ইসলাম, ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অগ্রগতি” এবং স্ট্রউক-অন-ট্রেন্টের দারিদ্র্য ও দুর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বর্ণনা করা হয়।
জালিয়াতির দীর্ঘ তদন্তের পরে তাদের কাছে যে তহবিল পাওয়া গেছে তার উপর ভিত্তি করেই আদালতে গ্যাং সদস্যদের একেকজনকে আলাদা আলাদা ভাবে অর্থ প্রদান করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
মর্টগেজ ফ্রড গ্যাং: যত অর্থ দিতে হবে
* মেহবুব আখতার (‘পীর পান্ডারিম্যান’)
জালিয়াতি থেকে আয় ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড। আদালত কর্তৃক তিন মাসের মধ্যে ফেরতযোগ্য ১ মিলিয়ন ৮শ’ ৬৩ হাজার ৫শ’ ৪ পাউন্ড অর্থ আদায়ের আদেশ, অনাদায়ে আরও আট বছরের কারাদণ্ড।
* মোহাম্মদ হোসেন
জোচ্চুরিতে অর্জিত অর্থের পরিমাণ ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাউন্ড। তিন মাসের মধ্যে ১ মিলিয়ন ১শ’ ৫২ হাজার ৪শ’ পাউন্ড হস্তান্তর করার আদেশ; অনাদায়ে আরও আট বছরের অতিরিক্ত জেইলভোগ।
* খাদিজা আখতার
তিনি বানিয়েছেন ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ড। তিন মাসের মধ্যে ৯শ’ ৪৯ হাজার ২শ’ ৩০ পাউন্ড ফেরত দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে, নয়ত কাঠগড়ার পেছনে কাটাতে হবে আরও ছয় মাস।
* রুশবম্মানী আখতার
তিনি কামিয়েছেন ৪শ’ ৫০ হাজার পাউন্ড। তিন মাসের মধ্যে ২শ’ ৩৭ হাজার পাউন্ড পরিশোধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় অতিরিক্ত ছয় মাসের কারাভোগ
* গ্রাহাম লকস্টোন
তিন মাসের মধ্যে তাকে ৮ হাজার ৫শ’ ৯৫ পাউন্ড ফেরত দিতে বলা হয়েছে, নয়ত ছয় মাস জেলে থাকার আদেশ।
* মাইকেল কলিন্স
অর্জন করেছেন ৩০ হাজার পাউন্ড। তিন মাসের মধ্যে ১৩ হাজার পাউন্ড পরিশোধ করতে বলা হয়, অথবা অতিরিক্ত সাত মাস কারাবাস।
* মোহাম্মদ গাফফার
অর্জন করেছে ৭৫ হাজার পাউন্ড। তিন মাসের মধ্যে ১১ হাজার ৩শ’ ২৮ পাউন্ড পরিশোধ করতে হবে, নয়ত আরও সাত মাস কারাভোগ করতে হবে।
* আবদুল ওয়াহাব – বানিয়েছেন ৪শ’ ২৭ হাজার ৮৫ পাউন্ড। তিন মাসের মধ্যে ফেরত দিতে হবে ২২ হাজার ৬শ’ ৯৪ পাউন্ড, অন্যথায় অতিরিক্ত সাত মাস কারাদণ্ড।
* নাকিয়াৎ আখতার – জালিয়াতি থেকে তার আয় ৮শ’ ৭৭ হাজার ৮শ’ ৭৪ পাউন্ড। ৮৯ হাজার ১শ’ ২ পাউন্ড হস্তান্তর করতে হবে, নয়তো অতিরিক্ত ৯ মাস কারাভোগের আদেশ দিয়েছে আদালত।#TS#