সিলেট অফিস : মেয়ের সাথে প্রেম ও দৈহিক মিলনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে মেয়ের প্রেমিকের হাতে খুন হতে হয়েছে বিয়ানীবাজারের রাজমিস্ত্রি নজরুল ইসলামকে। কাজ পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে রাজমিস্ত্রি নজরুলের সাথে সখ্যতা গড়ে পরবর্তীতে ফোনের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে নির্জণ স্থানে প্রথমে কাঠের রোল দিয়ে পেছন দিক থেকে আঘাত করে পরে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে মেয়ের প্রেমিক লিমন। আর খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই খুনি আব্দুল মুবিন লিমন (১৮) ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। হত্যাকান্ডের ২০ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ হত্যা রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িত আব্দুল মুবিন লিমনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গতকাল সোমবার বিয়ানীবাজার থানার ওসির কক্ষে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জকিগঞ্জ সার্কেল সুদিপ্ত রায় সংবাদ সম্মেলন করে আটক লিমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাংবাদিকদের উপরোক্ত তথ্য প্রদান করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জকিগঞ্জ সার্কেল সুদিপ্ত রায় জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় বিয়ানীবাজার উপজেলার নন্দিরফল গ্রামের রাজমিস্ত্রি নজরুল ইসলামকে (৪২) অজ্ঞাতনামা ফোনে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্ঠি হয়। পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করে। রবিবার রাতে পুলিশ বারইগ্রাম এলাকা থেকে আটক করে আব্দুল মুবিন লিমনকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশের কাছে সে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তি মোকাবেক হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কাঠে রোল ও একটি ছুরা লিমনের দেখানো মতো জায়গা থেকে উদ্ধার করে।
লিমনের দেয়া তথ্য মতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদিপ্ত রায় জানান, আসামী আব্দুল মুবিন লিমন (১৮) এর সাথে রাজমিস্ত্রি নজরুলের মেয়ের দীর্ঘদিন যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। প্রেমের ঘটনা নিহতের স্ত্রী হাছনা বেগম এবং নজরুল ইসলাম জানার পর তারা তাদের মেয়েকে আব্দুল মুবিন লিমনের এর সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর তার মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং নজরুল ইসলামকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রেমিকার সাথে ২ মাস থেকে যোগাযোগ ও শারিরিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় অনেকটা উম্মাদের মতো হয়ে যায় প্রেমিক লিমন। কিভাবে নজরুলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া যায় সেই পরিকল্পনা আঁটতে থাকে খুনি লিমন। কয়েক দিনে থেকে প্রেমিকার পিতার সাথে সে কৌশলে সম্পর্ক স্থাপণ করে একটি বড় কাজ পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলতে থাকে। ঘটনার দিন শনিবার সন্ধ্যায় আসামী আব্দুল মুবিন লিমন খুন হওয়া নজরুল ইসলামকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোবাইলে কল করে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়া যায়। ঐদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌছার সাথে সাথে রাতের অন্ধকারে আসামী লিমন কাঠের রোল দিয়ে তার মাথার পিছনে ও সামনের দিকে আঘাত করে। আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে আসামী লিমন তার প্যান্টের পকেটে থাকা ধারালো ছুরা বের করে নজরুলের গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
পুলিশ কর্মকর্তা সুদিপ্ত রায় জানান, আসামী লিমন এতটাই উম্মাদ হয়েছিল যে রোল দিয়ে নজরুলকে যখন প্রথম আঘাত করে তখন নজরুল মাঠিয়ে লুটিয়ে পড়ার আগে বলছিলেন ‘ভাতিজা এ কি করছিস’। কিন্তুু লিমন নজরুলের কোন কথা না শুনেই পর পর কয়েকটি আঘাত করলে নজরুল মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে এবং পরে ছুরা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে বীরদর্পে বাড়িতে চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি অবনী শংকর কর, ওসি তদন্ত জাহিদুল ইসলাম। ওসি জানিয়েছে, আটক আব্দুল মুবিন লিমনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করা হবে।