মঙ্গলবার শুনানী, আন্তর্জাতিক আদালতে সেনাদের পক্ষ নেবেন সু চি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে লড়তে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নেদারল্যান্ডের পথে রওনা হয়েছেন।

আজ রোববার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর বিমানবন্দর থেকে তিনি হেগের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। খবর রয়টার্স।

আগামী মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে অভিযোগের প্রথম শুনানি হবে। সেখানে নিজের দেশের নবীন গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন ব্যক্তিগতভাবে সুচি। ওই শুনানিতে তিনি ‘জাতীয় স্বার্থের পক্ষ’ অবলম্বন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এটা করার মাধ্যমে তিনি সেই সেনাবাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করবেন, যারা তাকে এক সময় ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য বছরে পর বছর গৃহবন্দি করে রেখেছিল।

আগামী ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডের হেগের আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের গণহত্যা নিয়ে অভিযোগের প্রথম শুনানি হবে; সু চি এতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। রোববার বিকালে সু চির কয়েক ডজন সমর্থকও হেগের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আগামী কয়েকদিন শহরটিতে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছেন তারা। আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের হয়ে সু চির লড়ার ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার বন্ধু বলে পরিচিত প্রভাবশালী অনেককে বিস্মিত করেছে। তার এমন পদক্ষেপ বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দাও কুড়িয়েছে।

নেদারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি-য়ের সঙ্গে বৈঠক করেন সু চি। বৈঠকে উভয় দেশ শক্তিশালী মিত্রতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিভাগের ডেপুটি পরিচালক ঝাও লিজিয়ান জানিয়েছেন।

পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত দেশ গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। এতে সমর্থন রয়েছে ৫৭ জাতির সংগঠন ওআইসির। মামলায় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপরে গণহত্যা, ধর্ষণ সহ জাতিনিধনের অভিযোগ আনা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর মধ্যে গণহত্যাই সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ। তিন দিনের শুনানি চলাকালে গাম্বিয়া আইসিজেতে জাতিসংঘের বিচারকদের ১৬ সদস্যের প্যানেলের কাছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ‘অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ’ জারি করার আবেদন জানাবে। গাম্বিয়ার পক্ষে এই মামলায় লড়বেন বৃটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত আইনমন্ত্রী আবুবাকর তামবাদোউ। তিনি ১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডায় গণহত্যার মামলায় এক দশকের বেশি সময় লড়াই করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ কথিত হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। গত দুই বছরে সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে অভিহিত করে জাতিসংঘ।

উদ্বেগকে একপাশে সরিয়ে রাখার যে সিদ্ধান্ত সু চি নিয়েছেন তাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকে সমর্থন দেয়া হয়। এতে আন্তর্জাতিকভাবে তার সুনাম বর্তমানে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার চেয়ে আরো বেশি কলঙ্কিত হবে তার সুনাম। দেশের মানুষের পক্ষে আবারও তিনি চ্যাম্পিয়ন হবেন, এ জন্য দেশের ভিতরে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

Advertisement