ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ভারতের মহারাষ্ট্রে ক্ষমতার দখল নিয়ে জলঘোলা কারবার চলছেই। প্রধান শক্তি শিবসেনাকে ডিঙিয়ে হঠাৎ করেই দৃশ্যপটে হাজির বিজেপি। শনিবার সকাল ৬ টায় সরকার গঠন করেছে বিজেপি ও অজিত পাওয়ার নেতৃত্বাধীন এনসিপির একাংশ। রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করেছেন বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফারনাভিস এবং এনসিপির পক্ষ থেকে ডেপুটি মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শারদ পাওয়ারের ভাতিজা অজিত পাওয়ার।
অক্টোবরের লোকসভা নির্বাচনে শিবসেনা, বিজেপি ও এনসিপি তিন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হলে জোট সরকারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় রাজ্যটিতে। কিন্তু বিজেপি-শিবসেনা জোটের ৩০ বছরের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে ক্ষমতার ৫০-৫০ বন্টন নিয়ে। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন জেতা শিবসেনা জোট বাধার জন্য আলোচনা চালিয়ে আসছিল তৃতীয় শক্তি এনসিপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে।
এদিকে অজিত পাওয়ার বিজেপিকে সমর্থন দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রধান দাবিদার শিবসেনা। শিবসেনা প্রধান উদ্বভ ঠাকুর বলেন, অজিত পাওয়ার পেছন থেকে শিবসেনার পিঠে ছুরি মেরেছে। এছাড়া শনিবার ভোরে দেবেন্দ্র ফারনাভিস মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পর নীরবতা ভেঙেছেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন ডেকে শারদ পাওয়ার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অজিত পাওয়ার ছাড়া মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে দেবেন্দ্র ফারনাভিসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এনসিপির পক্ষ থেকে আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না।’
শুক্রবার রাতেই এনসিপি কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে শিবসেনা নেতৃত্বাধীন জোটকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও এই ভোলবদল প্রসঙ্গে শারদ পাওয়ার জানান, শনিবার সকালে সাড়ে ৬টা নাগাদ তিনি ফোনে খবর পান যে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির বাসভবে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অজিত পাওয়ার ছাড়া এনসিপির অন্য বিধায়কদের কেউই এই শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট এখনও সক্রিয় রয়েছে। নির্বাচিত সমস্ত বিধায়ক এই জোটকেই সমর্থন করছেন।’
এনসিপি প্রধান সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘কংগ্রেস, শিবসেনা এবং এনসিপি নেতারা একসঙ্গে সরকার গঠনের জন্য এসেছিলেন। সরকারি হিসাবে মহারাষ্ট্রের ৪৪, ৫৬ এবং ৫৪ জন বিধায়ক আমাদের সঙ্গে ছিলেন যাঁরা সরকারকে সমর্থন করেছিলেন। বেশ কয়েকজন নির্দল প্রার্থীও ছিলেন আমাদের সঙ্গে। ফলে আমাদের কাছেও ১৭০ জনের সমর্থন রয়েছে।’
এদিকে ‘বিদ্রোহী’ এনসিপি বিধায়কদের একজন বলেন, ‘আমরা হঠাৎ করে অজিত পাওয়ারের কাছ থেকে ফোন পেয়েই সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কোনও ধারণা ছিল না যে এই সিদ্ধান্ত দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধে। অন্য আরেকজন বিধায়ক বলেন: ‘আমরা জানতে পারি যে অজিত পাওয়ারের সঙ্গে আমাদের দলের ৮-১০ বিধায়ক হঠাৎ করেই এক বৈঠকের জন্য একসঙ্গে হয়েছেন। পরে আমরা জানি যে ওখানে আসলে শপথ অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাদের এ সম্পর্কে কারও কোনও ধারণা ছিল না।’ ওই বিধায়ক আরও জানান,’আমরা কোনভাবেই এইসবের অংশ নই এবং অজিত পাওয়ার আলাদাভাবে এসব করেছেন। আমাদের সবার মত এখনও এনসিপি-শিবসেনা-কংগ্রেসের জোটের পক্ষেই রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বলেন, ‘এটি বিজেপির একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছাড়া আর কিছুই নয়।’ তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার স্পষ্টভাবে জানান,’আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত যে আজ (শনিবার) বিজেপি নেতৃত্বাধীন যে সরকার শপথ নিয়েছে, তাদের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার মতো বিধায়কদের সমর্থন নেই। আমরা শিবসেনাকে পুরোপুরি সমর্থন করি এবং উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বেই সরকার চাই।’
এনসিপি প্রধান বলেন, ‘এনসিপির কোনও প্রকৃত সদস্য বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবে না।’ একইসঙ্গে তার দলের মাত্র ১০-১১ জন বিধায়ক অজিত পাওয়ারের পক্ষে রয়েছেন এবং এনসিপির বড় অংশ শিবসেনা নেতৃত্বাধীন সরকারকেই সমর্থন করে বলে জানান তিনি।