:শিব্বীর আহমদ (শুভ):
করোনা বা কভিড-১৯ এর আক্রমণে দিশেহারা আমরা অনেকেই নানা ধরণের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে প্রতিনিয়ত এমন সব নেতিবাচক পরিস্হিতির সৃষ্টি করছি যা কখনও মানবতার মানদন্ডের সূচকে হয়তোবা অনেক নীচে।
যা কোনভাবেই কাম্য নয় । তারপরও এই সূচকের কাঁটা কতো মানবতার ফেরিওয়ালারা স্বর্গের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন সেটার হিসেবও আমরা যেমন রাখি না বা তাদের কথা তেমন বলিওনা ।

অনেক ইতিবাচক কর্মকান্ডই পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে অথবা ঐ সব অযাচিত কর্মকান্ডের ভীড়ে ভালো খবরগুলো প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে । হতে পারে নেতিবাচক সব শুনতে শুনতে আমাদের মন মগজ ধোলাই হয়ে গেছে কিম্বা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে যার কারণে ইতিবাচক ঘটনাও আমরা ফলাও করে বলতে পারিনা। হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে ও ভাল মানুষ আছে । এই দেখুন বেশীর ভাগই ভালো ।
সামান্য কয়েকজনের দোষে আমরা গোটা সমাজ কলুষিত হতে দিতে পারিনা।কাদা ছোড়াছুঁড়ি না খেলে আমরা কি রিলে রেইস খেলতে পারি না ?
লাশ বহন করতে মসজিদের খাটিয়া না দেয়া লোকদের কথা না বলে আমরা দক্ষিণ ডুমুরিয়ার সেইসব উলামা পরিষদের কথা বলতে পারি কিম্বা চট্রগ্রামের গাউসিয়া কমিটির উলামায়ে কেরামদের কথা যারা নিজ উদ্যোগে করোনায় মৃত মানুষদের স্বেচছাসেবক হিসেবে গোসল এবং দাফনের ব্যবস্হা করছেন।
মানুষ লকডাউন মানছে না , এই খবর না ছড়িয়ে আমরা জানাতে পারি যে দিনাজপুরের সুইহারী আশ্রমপাড়ার ১৭০ পরিবার যারা নাকি নিজ উদ্যোগেই স্বেচ্ছায় লকডাউনে চলে গেছেন ।
ত্রাণ নিয়ে যে কোন্ নায়ক এলেন না , সে হিসেবে না গিয়ে আমরা গাজীপুরের কাপাসিয়া উজলী দীঘির পাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ উদ্দিনের কথা বলতে পারি যিনি মানবতার ঘর তৈরী করে হতদরিদ্রদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করছেন নিরন্তর।
ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলে ফেইসবুকে দিয়ে আবার সেটা ফিরিয়ে নেয়া লোকটার কথা না বলে আমরা ঢাকার রাস্তার ঐ সব্জি বিক্রেতার কথা বলতে পারি , যিনি সব্জি বিক্রি না করে তার ভ্যানের সব সব্জি গরীব রিক্সাওয়ালাদের অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন ।
সামাজিক দূরত্ব কেন মানছেন না বলে চিৎকার চেঁচামেচি না করে মাগুরার খামার পাড়া বাজারের দোকানির কথা বলতে পারি যিনি তাঁর দোকানের সামনে সমান দূরত্বে গোল গোল বৃত্ত এঁকে মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা শেখাচ্ছেন ।
শ্রমিক পালা সিস্টার হেলেনের কথা না বলে সিলেটের নারী ফার্মিস আক্তারের কথা বলতে পারি যিনি নিজে রান্না করে , গাড়ী করে এনে এসব খাবার নিজ হাতেই ছিন্নমূলদের মাঝে বিতরণ করেছেন ।
রুবানা হক বা কারো গায়েবী আদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দিন ব্যাপী মার্চপাষ্টের কথা না বলে বিদ্যানন্দ ও জাগো ফাউন্ডেশনের সেই সব স্বেচ্ছাসেবকদের কথা বলতে পারি যারা সেই রাতে ট্রাকে করে খাবার নিয়ে ছুটে গিয়েছিলো হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত শ্রমিকদের বাচ্চাদের হাতে সামান্য খাবার তুলে দিতে ।
এসি ল্যান্ড সাইয়েমা হোসেন এর কথা না বলে মানবতার দেবদূত নওগাঁর পত্নীতলার ইউ এন ও লিটন সরকারের কথা বলতে পারি , যিনি রাতের আঁধারে অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি ফেরি করে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন ।
চাল চোরদের ফিরিস্তির সাথে সাথে সবাইকে এক পাল্লায় না মেপে হাফছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল কাদের কিম্বা সিলেট এর কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এর কথা বলতে পারি যারা নিজ উদ্যোগেই শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন ।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়ি কিম্বা শুধু শুধু পেটানোর কথা না বলে রমনা জোনের কয়েকজন উপ – পরিদর্শক ও পুলিশ সদস্যরা যারা নিজেদের বেতনের টাকা থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে শতাধিক দরিদ্র পরিবারের হাতে খাবার তুলে দিয়েছেন তাদের কথা বলতে পারি ।
সুশীল কিম্বা কোন মহাজনের দিকে আঙ্গুল না তোলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও পে ইট ফরওয়ার্ড
যৌথভাবে এবং বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন যে হাজার হাজার পি পি ই তৈরী করে চিকিৎসক বা স্বাস্হ্যকর্মীদের বিনামূল্যে বিতরণ করেছে তাদের কথা বলতে পারি ।
ঢালাও ভাবে ডাক্তারদের সমালোচনা না করে বাগেরহাটের ভ্রাম্যমান মেডিক্যাল টিম যারা হটলাইনে খবর পেয়েই রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন কিম্বা নাটোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: আয়েশা সিদ্দিকা আশার কথা বলতে পারি যিনি দুধের সন্তানকে বাসায় রেখে এসে হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ।
এমনি ভাবে শুধু অনিয়মের কথা না বলে আপনার আমার আশেপাশের সাদা মনের মানুষদের কথা বলতে পারি যে বা যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং দিনরাত কোনকিছুরই প্রত্যাশা না করে তাদের মহৎ কাজ করেই যাচ্ছেন । এরাই সত্যিকারের মানুষ । এদের কাছ থেকেই আমরা মানবতা শিখি, যে টার এখন বড়ই প্রয়োজন শুধু শুধু নেতিবাচকতার জাবর কাটা বন্ধ হোক ।
হুমায়ুন আজাদ স্যারের এক উক্তি দিয়েই শেষ করতে চাই , “কোন কালে এক কদর্য কাছিম দৌড়ে হারিয়েছিলো এক খরগোশকে ; সে গল্প কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে । কিন্তু তারপর সেই খরগোশ কত সহস্রবার যে সেই কাছিমকে হারিয়েছে সে কথা কেউ বলে না ।
শিব্বীর আহমদ শুভ (সংবাদ কর্মী কবি ও সদস্য লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব)