॥ ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী ॥
এ সপ্তাহের সবচেয়ে আনন্দের খবর হলো – করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বর্তমান বাজার দরে টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারকে নগদ সহায়তার জন্য সরকার যে কর্মসূচি নিয়েছে তাতে এই এডিবির অর্থ কাজে লাগানো হবে। এডিবির অর্থে করোনাকালীন জরুরি সহায়তা হিসেবে প্রায় ২০ লাখ গরিব পরিবারকে মাসে ২৩ ডলার বা প্রায় ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ১০ লাখ পরিবারকে মাসে ২০ কেজি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ উপকৃত হবে।
খবরটি নিঃসন্দেহে সরকারের প্রশংসার দাবী রাখে। কারণ করোনার জন্য সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ খুবই অসহায় দিন যাপন করছে আর সরকার সেটা উপলব্দি করেই এই মহতি উদ্দ্যোগ নিয়েছেন। সরকারের উদ্দ্যোগ এই খবরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইতিপূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন যা সাধারণ মানুষের সাথে ব্যবসায়ী সমাজ পর্যন্ত সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্ত সাধারণ মানুষকে দেয়া প্যাকেজগুলো বাস্তব জীবনে তেমন সুফল বয়ে আনতে পারেনি। তার প্রধান এবং একমাত্ৰ কারণ মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি। অবশ্য বাংলাদেশের স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। তবে এই বৈশ্বিক মানবিক বিপর্যয়ে, সময়ের পরিবর্তন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তৎপরতা এবং সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় অনেকের মতো আমারও আশার সঞ্চার হয়েছিলো এবার হয়তো আগের মতো দুর্নীতি হবেনা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সব কিছু উপেক্ষা করে চাউল আর ত্রান নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির কেলেঙ্কারি বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে এবং হচ্ছে। যা দল ও সরকারকে মারাত্মক বেকায়দায় ফেলেছে এবং সাধারণ জনগণেরও ভুগান্তি বেড়েছে। মনে হচ্ছে সরকার এবং সাধারণ জনগণ এদের কাছে খুবই অসহায়।
উপরের খবরের দুটি অংশ রয়েছে। একটি অংশে বলা হয়েছে সরকার ২০ লাখ গরিব পরিবারকে মাসে প্রায় ২ হাজার টাকা দিবেন আর অপর অংশ হলো ১০ লাখ পরিবারকে মাসে ২০ কেজি খাদ্য সহায়তা দিবেন। খবরে অবশ্য কি ভাবে বিতরণ করা হবে বলা হয়নি। তবে কেজি করে বিতরণের কথা শুনে মনে হলো সরকার আবার হয়তো পুরাতন পদ্ধতি অনুসরণের চিন্তা ভাবনা করছেন। আমার প্রশ্ন গরিব মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সবকিছু কিনতে পারে, তাই শুধুমাত্ৰ চাউল কেনার দায়িত্ব এবং বন্টনের মতো কাজ সরকার কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেন নিবে? এই পদ্ধতিটি কিভাবে বাংলাদেশে এসেছে কিংবা আবিষ্কার হয়েছে জানা নাই তবে এই পদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে দুর্নীতির সুবর্ণ সুযোগ, যা যুগ যুগ ধরে চলছে।
সুতরাং এখন সময় এসেছে সরকারকে নতুন করে ভেবে দেখার – সাধারণ মানুষের কাছে কি ভাবে সরাসরি এই সহায়তা পৌঁছে দেয়া যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যদি আবার পাঠানো হয় তাহলে সুফলের চেয়ে কুফলই বেশি হবে। আর এটি হবে “শিয়ালের কাছে ছাগল বাগী দেয়ার মতো। ” সাধারণ মানুষ সঠিক ভাবেতো পাবেইনা বরং সেই সাথে দল ও সরকার আরেকটি মারাত্মক সমালোচনার মধ্যে পড়বে। জনগণের দুর্ভোগও বাড়বে। কিছুদিন আগে দেখেছি সরকার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই সহায়তা দেয়ার চিন্তা করছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। ডিজিটাল যুগে এই পদ্বতি গ্রহণ করা হলে নিঃসন্দেহে দুর্নীতি কমবে এবং মানুষ সুফল পাবে। পৃথিবীর সকল উন্নত দেশে ডিজিটাল পদ্বতিতে জনগণকে ত্রান সহায়তা দেয়া হয়। সুতরাং এটি একটি পরীক্ষিত পদ্বতি। তবে দীর্ঘদিন থেকে স্থায়ী ভাবে চলমান এই দুর্নীতির ধারা থেকে বের হয়ে আসা খুব সহজ নয়। এরকম সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া এবং বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য সত্যি চ্যালেঞ্জের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। তাই সাধারণ জনগণ মনে করে একমাত্ৰ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই এই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
লেখক:
ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
কন্ট্রিবিউটর, ব্রিট বাংলা২৪ এবং প্রিন্সিপাল সলিসিটার, কেসি সলিসিটর্স, লন্ডন।