ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভোট জালিয়াতির অভিযোগকে ‘মানসিক বিকারগ্রস্তের’ কাজ বলে অভিহিত করেছেন ফিলাডেলফিয়ার রিপাবলিকান কমিশনার আল শমিডট। ফিলিডেলফিয়ায় নির্বাচন পরিচালনায় তিনজন কমিশনারের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি ট্রাম্পের ওই দাবিকে বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছেন। শমিডট আরো অভিযোগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর আল শমিডটের কর্মকর্তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পরাজয় স্বীকার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আরেক রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তিনি ৪৬তম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়ে নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলে সার্টিফাই করেছেন। অনলাইন ডেইলি মেইল এ খবর দিয়ে বলেছে আল শমিডট যুক্তরাষ্ট্রে ‘৬০ মিনিট’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভোট জালিয়াতির অভিযোগ মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষের মতো। নির্বাচনে তাকে এবং তার টিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শমিডট।
তিনি বলেন, আমরা তো বৈধ ভোট গণনা করেছি। যে ভোট ভোটাররা দিয়েছেন আমরা সেই ভোট গণনা করেছি। তা সত্ত্বেও এই ভোট নিয়ে যে বিতর্ক উঠানো হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। উল্লেখ্য, ইউএস গভর্নমেন্ট একাউন্টেবলিটি অফিসের (জিএও) সাবেক একজন সিনিয়র এনালিস্ট শমিডট। তিনি ২০১১ সালে নির্বাচন করেছেন। একই সঙ্গে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরো আধুনিক এবং আরো কার্যকর করতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার জন্য তিনি গর্বিত হতে পারেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে তাতে তিনি হতাশাগ্রস্ত।
ওদিকে ফিলাডেলফিয়ায় ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে কাজ করতে নিজের ছেলে এরিক ট্রাম্প এবং আইনজীবী রুডি গিলিয়ানিকে ফিলাডেলফিয়ায় পাঠিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এই রাজ্যে রেকর্ড পরিমাণ মানুষ মেইলে ভোট দিয়েছেন। এর বেশির ভাগই ডেমোক্রেট সমর্থকদের ভোট। কিন্তু সমর্থকদের কাছে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মেইলে দেয়া ভোটের ওপর আস্থা রাখেন না। এর পরিবর্তে তিনি চান ব্যক্তিগতভাবে সবাই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিক। ফলে মেইলে দেয়া ভোট যখন গণনা শুরু হয় তখনই তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর কারণ মেইলে দেয়া ভোটের ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে থাকে। ফলে এরিক ট্রাম্প অভিযোগ করেন, এসব ভোট চরমমাত্রায় জালিয়াতির। ফিলাডেলফিয়ায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আইনজীবী রুডি গিলিয়ানি ফোর সিজনস টোটাল ল্যান্ডস্কেপিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ট্রাম্প অবশ্যই পরাজয় স্বীকার করছেন না। সোমবার তিনি এ জন্য মামলা করবেন।
কিন্তু এমন বাক্য, মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন আল শমিডট। তিনি বলেছেন, আমাদের রিপাবলিকের জন্মস্থানে ভোট গণনায় খারাপ কিছুই করা হয় নি। নির্বাচনের আগে যেসব ভোটার তাদের ভোট দিয়েছেন, সেই বৈধ ভোটারদের ভোট গণনা করা নিশ্চয়ই কোনো দুর্নীতি নয়। কোন প্রতারণা নয়। এটা হলো গণতন্ত্র। কিন্তু এসব ভোট গণনা করা উচিত হবে না বলে যে যুক্তি দাঁড় করানো হয়েছে তাতে তিনি হতভম্ব। এসব ভোট গণনা করা নিশ্চয় কোনো বিতর্কিত কাজ নয়। ন্যূনতমপক্ষে এ ভোটগুলো গণনা করা উচিত।
আল শমিডট বলেছেন, ভোট গণনা অব্যাহত রাখার কারণে তার সমর্থকদের ফোন করে হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরা। ভোট গণনায় জালিয়াতি এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে তারা ফোনে হুমকি দিচ্ছে। আপনাদেরকে কি হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে শমিডট বলেছেন, হ্যাঁ, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট গণনার জন্য এমন হুমকি দেয়া হচ্ছে। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির থেকে যেকোনো ধরণের আইনি ব্যবস্থায় নেয়া হোক না কেন তার জবাবে রাজ্যের পক্ষে অবস্থান নেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন পেনসিলভ্যানিয়ার এটর্নি জেনারেল জোশ শাপিরো। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির দুটি জিনিস চাইছে। এক হলো- ভোট গণনা বন্ধ করতে হবে। দুই- যেখানে মেইলে আসা ভোটের এনভেলপ খোলা হচ্ছে এবং স্ক্যান করা হচ্ছে সেখানে তাদের পর্যবেক্ষকদের আরো কাছাকাছি যেতে দিতে হবে। কিন্তু তাদের প্রথম পছন্দ ভোট গণনা বন্ধ করাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। দ্বিতীয় দাবির প্রেক্ষিতে তাদের পর্যবেক্ষকরা ১০ ফুট দূরত্ব থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে পেরেছে। কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন বাইনোকুলার।
এখানে উল্লেখ্য, ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের পক্ষে আইনি টিমে ছিলেন রিপাবলিকান আইনজীবী বেন গিন্সবার্গ। তিনিও বলেছেন, ট্রাম্পের আইনি টিম নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। তারা ফ্লোরিডায় যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন ২০০০ সালে, তার সঙ্গে এর কোনো তুলনা চলে না।