:: ইব্রাহিম খলিল ::
হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম কেন্দ্রস্থল সিটি অব লন্ডনে প্রথমবারে মতো প্রতিনিধিত্ব করছেন একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী। তার নাম মনসুর আলী। কমিউনিটিতে যার আরেকটি পরিচয় হলো, তিনি একজন ফিল্ম মেকার। সম্প্রতি সিটি অব লন্ডন কর্পোরেশনের নির্বাচনে তিনি লেবার পার্টি থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হন।
সিটি অব লন্ডন হচ্ছে, ফাইনান্সিল ক্যাপিটাল অব দ্যা ওয়ার্ল্ড। মাত্র স্কয়ার মাইলের এই এলাকায় রয়েছে বিশ্বসেরা ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানগুলো। যেখানে কর্মরত প্রায় চার লাখ ৬৫ হাজার মানুষ। সিটি অব লন্ডনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় কর্পোরেশনকে ঘিরে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন লর্ড মেয়র। রয়েছেন ১০০ জন মেম্বার বা কাউন্সিলার। বিশ্বের প্রাচীন এই কর্পোরেশনে বাংলাদেশী কমিউনিটি থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী মনসুর আলী। তিনি চলতি বছরের ২৭ মার্চ পোর্টসকেন ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হন।
পাঁচ‘শ বছরের পুরনো এসেম্বলি হলে বসে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন মনসুর আলী। আর্ট এবং কালচারের জন্য বিশ্বখ্যাত সিটি অব লন্ডন নিয়ে মনসুর আলীর রয়েছে বেশ কিছু সুর্নিষ্ট পরিকল্পনা। রয়েছে সিটির সাথে বাংলাদেশী কমিউনিটির সেতুবন্ধনের নানা চিন্তা ভাবনা। সিটির পাশেই টাওয়ার হ্যামলেটসের ব্রিকলেইন, হোয়াইটচ্যাপল, ওল্ডগেইট, বেথনালগ্রীনসহ বিভিন্ন এলাকায় শক্তিশালী বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। রাজনীতি, ব্যবসা বানিজ্য, শিক্ষা, সমাজকর্ম ও কমিউনিটি কেন্দ্রিক সংগঠন গড়ে উঠলেও সিটিকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের কার্যক্রম একেবারেই নেই। বাংলাদেশী কমিউনিটির সন্তান হিসেবে এই সুযোগে সিটির সাথে স্থানীয় কমিউনিটির সম্পর্ক আরো বাড়াতে চান তিনি। এ লক্ষে তিনি নির্বাচিত হওয়ার দিন থেকে নিয়ে ১০০ দিনের একটি কর্মসূচি নিয়েছিলেন মনসুর আলী।
মনসুর আলীর ক্যারিয়ার আর্ট এবং কালচার কেন্দ্রিক। তাই প্রথমবারের মতো সিটি অব লন্ডনে তিনি বাঙালী ঐতিহ্য বৈশাখী উৎসব এবং বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করতে চান। এছাড়া লাইম লাইট ফিল্ম এওয়ার্ড এবং এশিয়ান কমিউনিটি ব্যবসা বানিজ্যকে সিটিতে প্রমোট করতে একটি এসোসিয়েশন গঠন করতে চান তিনি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্তানী, শ্রীলংকানসহ এশিয়ার বিভিন্ন এথনিক কমিউনিটির ব্যবসার একটি সুযোগ গড়ে উঠবে বলে মনে করেন মনসুর আলী। বিশ্বখ্যাত গিল্ডহলে বাংলাদেশী এবং ব্রিটিশ ঐতিহ্যের সমন্বয়ে উৎসব আয়োজন করতে চান। যার মাধ্যমে তৃনমূল মানুষের সাথে সিটিবাসীর একটি নতুন সম্পর্কের সূচনা হবে।
সিটি অব লন্ডন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীণ কর্পোরেশ। ব্যবসা বানিজ্য, শিক্ষা, পুলিসিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পূর্ন স্বাধীন সিটি অব লন্ডন অথরিটি। ২০০৬ সালে সিটি অব লন্ডন কর্পোরেশন নাম পরিবর্তন করে এর নতুন নামকরন করা হয় কর্পোরেশন অব লন্ডন। এটি পরিচালিত হয় সম্পূর্ন স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে। মোট জনসংখ্যা হলো প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। লন্ডনের অন্য ৩২টি বারার চেয়ে আলাদা নিয়ম রয়েছে এই কর্পোরেশনে।
১০৬৭ সালে উইলিয়াম দ্যা কনকুয়ের এই কর্পোরেশন অনুমোদন করেন। আর ১১৮৯ সালে স্বতন্ত্র পদ্ধতির মেয়রাল সিস্টেম চালু হয় কর্পোরেশন অব লন্ডনে। যার পরবর্তী নামকরন হয় লর্ড মেয়র। মোট ২৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গড়ে উঠা সিটি অব লন্ডন কর্পোরেশনে প্রতিবার নির্বাচিত হন মোট ১০০ জন কাউন্সিলারম্যান। যাদেরকে বলা হয়ে থাকে কর্পোরেশন মেম্বার।
বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সু-সন্তান মনসুর আলী, তার বাবা মার সাথে বিলেতে পারি জমান মাত্র ২ বছর বয়সে। লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভাসির্টি থেকে ফিল্ম মিউজিক এন্ড থিয়েটার বিষয়ে গ্রাজুয়েট মনসুর আলী নির্মান করেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচিত্র ‘সংগ্রাম‘। তার পরিচালিত সংগ্রাম ফিল্ম ইতিমধ্যে অনেক নাম কুড়িঁয়েছে। লাইম লাইট এওয়ার্ডের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ফিল্ম সেক্টরে আলোকিত করতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ২০১২ সালে তাকে সিভিক এওয়ার্ডে ভুষিত করে।
ইস্ট লন্ডনের ওলগেইট এলাকায় বেড়ে উঠেছেন মনসুর আলী। স্থানীয় একটি মাল্টি মিলিয়ন ডেভোলাপমেন্ট প্রজেক্টে কমিউনিটির ক্ষতি হচ্ছে দেখে তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। তার ফল¯্রুতিতে তিনি রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। যোগ দেন লেবার পার্টির সক্রিয় রাজনীতিতে। তাতে তাকে বেগ পেতে হয়নি। তার যোগ্যতা ও দক্ষতায় তিনি কাউন্সিলার পদে মনোনয়ন পেয়ে যান লেবার পার্টি থেকে। প্রথমবারেই বিজয়ের মালা ছিনিয়ে নেন এই মেধাবী ফিল্ম মেকার। লেবারের বিজয়ী মোট ৫ জনের মধ্যেই তিনি নিজেকে স্থান করে নেন। বিজয়ের পরও তার ওয়ার্ডকে নিয়ে তার অনেক চিন্তা অনেক পরিকল্পনা। ওয়ার্ডের জনগনের যে কোন সুখ দু:খে তিনি সদা প্রস্তুত বলে জানান।
কৃতজ্ঞতা : ইব্রাহিম খলিল। সিনিয়র রিপোর্টার, চ্যানেল এস।