ব্রিটবাংলা ডেস্ক : পহেলা এপ্রিল থেকে ইউকেতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিএটি বা ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে। আপতত বছরে ৮৫ হাজার পাউন্ডের বেশি টার্নওভার হয়, এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে মেকিং ট্যাক্স ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিএটি রিটার্ন করতে হবে। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ভেতরে তা সবার জন্য বাধ্যতামূলেক করা হবে।
এদিকে মেকিং ট্যাক্স ডিজিটাল পদ্ধতি পহেলা এপ্রিল থেকে চালু হচ্ছে অথচ এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনো সচেতনতা গড়ে উঠেনি। বিভিন্ন সার্ভেতে দেখা গেছে, ইউকের প্রায় ২৪ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনো এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা। এই না জানার তালিকায় ইউকের বাঙালী ব্যবসায়ী হয়তো কম নয়! তাদের সচেতন করতেই লন্ডনের তাজ একাউন্টেন্টের উদ্যোগে গত বুধবার, ২৭ শে মার্চ ইস্ট লন্ডনে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার্স এন্ড কমার্স সংক্ষেপে বিবিসিসি’র বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একাউন্টেন্ট আবুল হায়াত নুরুজ্জামান। তিনি এমটিডির ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবিদের উপস্থিতিতে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত কমিটির প্রধান শাহগীর বখত ফারুক। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এসএসবিএ চেয়ারম্যান আজিজ চৌধুরী, লেখক ও ব্যবসায়ী নেতা আবুল কালাম আজাদ ছোটন, হ্যামলেটস ট্রেনিংয়ের প্রধান জামাল আহমেদ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, চ্যানেল এসের হেড অব নিউজ এবং ব্রিটবাংলা টুয়ান্টিফোর ডটকমের সম্পাদক কামাল মেহেদী, ওয়ানবাংলা সম্পাদক জাকির হোসেন কয়েসসহ আরো অনেকে।
মেকিং ট্যাক্স ডিজিটাল সংক্ষেপে এমটিডি। একটি সফটওয়ারের মাধ্যমে এমটিডি পদ্ধতিতে ভিএটি রিটার্ন করতে হবে ব্যবসায়ীদের। প্রায় ৮৫ হাজার পাউন্ডের বেশি টার্নওভার এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পহেলা এপ্রিল থেকে ভিএটি রিটার্নের জন্য এমটিডি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য সরকার ২০১৫ সালে ভিএটি রিটার্নের পুরনো কাগুজে পদ্ধতি বাদ দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিএটি রিটার্নের নতুন সিস্টেম চালুর ঘোষনা দিয়ে বলেছিল, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের ভেতরে ভিএটি রেজিস্টার্ড সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিএটি রিটার্ন করতে হবে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে সরকার ঘোষণা দিয়েছিল চলতি বছরের ১লা এপ্রিল থেকে চালু হবে এই পদ্ধতি। কিন্তু এমটিডি নিয়ে এখনো ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশাল একটি অংশ এখনো অন্ধকারে রয়েছে। ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স প্রায় ১ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর জড়িপ চালিয়ে দেখেছে, মাত্র ৩৮ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমটিডি উপযোগি সফটওয়ার আপডেট করেছে। আর প্রায় ১৯ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানর এমটিডির ব্যাপারে কোন ধারনা নেই। অন্যদিকে কেপিএমজির জড়িপে ১ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমটিডি পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছে। আর ১৯ শতাংশ বলেছে, এমটিডির মাধ্যমে ভিএটি রিটার্নে কোন এ্যাডভান্টেজ নেই। বরং ৫ শতাংশ বলেছে, এই সিস্টেম এইচএমআরসি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। তবে ১২ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, তারা পহেলা এপ্রিল থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিএটি রিটার্নের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
এদিকে দেশের মাত্র ২৫ শতাংশ একাউন্টিং কোম্পানী তৈরি রয়েছে এমটিডি পদ্ধতিতে হিসাব দাখিলের জন্য। আর ৩৬ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছে, এমটিডি পদ্ধতিতে যাবার জন্যে তাদেরকে আরো ৬ থেকে ১২ মাস লেগে যাবে।
এমটিডি পদ্ধতিতে হিসাব রক্ষায় ব্যর্থ হলে একেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ৫শ পাউন্ড জরিমানা করতে পারে এইচএমআরসি। তবে পরিপুর্ণভাবে সফটওয়ার তৈরি করার জন্য ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় দেবে এইচএমআরসি। অন্যদিকে এমটিডি পদ্ধতির বাইরে অন্য কোন পদ্ধতিতে হিসাব জমা দিলেও ৪শ পাউন্ড জরিমানা করতে পারবে এইচএমআরসি। প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এমটিডির জন্য রেজিস্টর হতে হবে। এর মাধ্যমে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের পর থেকে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৬১০ মিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করছে এইচএমআরসি।
এমটিডির জন্যে বিভিন্ন ক্যাটারির প্রায় ২২০ টি সফটওয়ার রয়েছে বাজারে। তবে এমটিডি অনুমোদিত একটি সফটওয়ার কিনতে হবে। এক্ষেত্রে একেকটির মুল্য ৮শ পাউন্ড থেকে ১১শ পাউন্ডের ভেতরে হতে পারে। যারা এখনো এমটিডির ব্যাপারে তৈরি নন সেইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের স্ব স্ব একাউনটেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।