যুদ্ধাপরাধের কথা প্রথমবার স্বীকার করেছে মিয়ানমার

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: প্রথমবারের মতো যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার ভয়াবহভাবে লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করেছে মিয়ানমার। তবে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সেখানকার প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে ২১ শে জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারি’র রিপোর্টের ১৫ পৃষ্ঠার ‘এক্সিকিউটিভ সামারি’। এখনও এ তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় নি। এ খবর দিয়ে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ২০১৭ সালে ‘জাতি নিধন’ অভিযানে সেনাবাহিনীরম অন্যায় সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। তবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সরকারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যে ভয়াবহভাবে নিয়ম লঙ্ঘন করেছে সে বিষয়ে এতে নজর দেয়া হয় নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমারের দাতাদের ও সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোকে পরিষ্কার হতে হবে যে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অবস্থা সৃষ্টি থেকে অনেকটা পিছিয়ে আছে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারি’র রিপোর্ট। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যে নিরাপদে ফিরে যেতে পারবে সে বিষয় এবং জবাবদিহিতার বিষয়ে নজর দেয়া হয় নি।

জাতিসংঘের নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ বিভিন্ন অধিকার বিষয়ক গ্রুপের তদন্তে রোহিঙ্গা নারী ও বালিকাদের ধর্ষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তৃত ডকুমেন্ট প্রকাশ করা সত্ত্বেও মিয়ানমার সরকারের এই তদন্তে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে গণধর্ষণের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় নি বলে দাবি করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, মিয়ানমার সরকার দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে। কমিশনের রিপোর্ট বলছে তারা দীর্ঘদিনের সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এখনও এ বিষয়টি বড় রকমের হতাশার। কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে তা জাতিসংঘের তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নৃশংসতার ভয়াবহতার বিষয় প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। হতাশাজনকভাবে সেনাবাহিনীর যৌন সহিংসতার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর দায়ী সিনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচারে ব্যর্থ হয়েছে তারা। ব্যাপক অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার বিশ্বাসযোগ্য ক্ষেত্রে তৈরি করতে পারে নি মিয়ানমার সরকারের ওই তদন্ত রিপোর্ট। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, কমিশন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট এই কমিশনের তদন্তে স্বচ্ছতা প্রতিফলিত হয় নি। তাদের রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বিভাগের এবং পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছে। বাস্তুচ্যুত করেছে। এদের বেশির ভাগই মুসলিম। এতে আরো বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধ ঘটে থাকতে পারে এবং ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে থাকতে পারে। মংডু শহর এলাকায় তুলাতলি, ছুট পাইন, মুয়াং নু ও গু দার পাইন গ্রামে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের অনেকে বেসামরিক অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। একে ইংরেজিতে ‘মাস কিলিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে রিপোর্টে।

Advertisement