যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তার দেশত্যাগেও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তার বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপি ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমবস্থায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের নানা অভিযোগের বিষয়ে আজ সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি অপরাধী হলে সেটি প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ না পেয়ে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। সরকারের উচ্চাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যা হয়েছে সেটি দেখতে থাকুন। ভবিষ্যতে কি হবে তাও দেখতে থাকুন।

যুবলীগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সম্মেলন হচ্ছে। চারটি সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। নভেম্বরের মধ্যেই সম্মেলনের কাজ শেষ করতে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা সম্মেলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। নেত্রী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন। তার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। যুবলীগের কাউন্সিলরা ঠিক করবে তারা কাদের নেতৃত্বে আনবেন। পার্টির সভাপতি ফাইনাল অথরিটি। তিনি পরিবর্তন করতে চাইলে অবশ্যই করবেন।

ক্ষমতাসীন দল ও জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোর অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন একটি ক্লাবের সভাপতি। তাই বলে কি তিনি ক্যাসিনো ব্যবসা করেন? স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা কাওসার ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। তাই বলে কি তিনি ক্যাসিনো ব্যবসা করেন? অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থা নেয়া যায় না। অভিযোগের ভিত্তি লাগে, প্রমাণ লাগে।

তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে কেউ রেহাই পাবেন না। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে কেউ রেহাই পাবে না। রাশেদ খান মেননও তো একটা ক্লাবের মালিক, প্রমাণ তো করতে হবে তিনি ক্যাসিনো ব্যবসা করেন।

তিনি বলেন, আমরা যা বলছি তা মুখে বলছি না, কালপ্রিটদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় কোনো দ্বিধা-সংকোচ নেই।

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, অভিযান চলবে, ১৫ দিনেই কি সব কমপ্লিট করব? আরও অনেক কিছুই দেখার আছে। কাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, কেন চলছে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। আমরা যা বলছি- মুখে বলছি না, অ্যাকশনে প্রমাণ করেছি। যারা কালপ্রিট, করাপশন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় কোনো ধরনের সংকোচ নেই।

প্রসঙ্গত যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার ক্ষোভ প্রকাশের চার দিনের মাথায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যা ব। ওই দিনই গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র আইন, অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগে গুলশান ও মতিঝিল থানায় চারটি মামলা করা হয়।

এর পর ২০ সেপ্টেম্বর রাতে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে হলুদ রঙের বিশেষ ধরনের ইয়াবা ট্যাবলেট ও অস্ত্রসহ কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া অভিযানে ক্যাসিনো চালানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম ও জুয়া খেলার বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

ওই দিনই নিকেতনের ১১৩ নম্বর বাসা থেকে যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া (জিকে) শামীমকে আটক করে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও একটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়।

শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় জিকে শামীম ও খালেদের অবৈধ আয়ের ভাগিদার ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদকে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতার করে র্যা ব। এ সময় তার ক্যাসিনো ব্যবসার ভাগিদার এনামুল হক আরমানকেও গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্লাবপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে জুয়ার আসর ও ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এ দুজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতারের পর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

তিনি যাতে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় বেনাপোল পুলিশ ইমিগ্রেশনের ওসি মহসিন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মহসিন খান বলেন, ঢাকা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও নেপালের নাগরিকরা যাতে কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে। ৩ দিনের মধ্যে তার এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বৃহস্পতিবার বিএফআইইউ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

তবে আগে থেকেই মৌখিকভাবে তার ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়। ফলে তার হিসাব থেকে টাকা তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। তার নামে দুটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

সোনালী ব্যাংকে তার দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে সাড়ে ১১ কোটি টাকা ঋণও রয়েছে। ক্যাসিনো ও জুয়াবিরোধী অভিযানে যুবলীগের পদস্থ কয়েকজন নেতাকর্মী আটক হয়েছেন।

এর মধ্যে জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ আরও অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র ও মদ আটক করেছে র‌্যাব।

আটকরা তাদের কর্মকাণ্ডের অংশীদার, সুবিধাভোগী ও প্রশ্রয়দাতা হিসেবে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম উল্লেখ করেছেন। এ কারণেই তার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

Advertisement