রাজনীতির অলঙ্ঘনীয় দেয়াল সামনে আনলেন ওবায়দুল কাদের

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: রাজনীতির অলঙ্ঘনীয় দেয়াল সামনে এনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকে একটা অলঙ্ঘনীয় দেয়াল উঁচু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দেয়াল আমাদের কর্ম সম্পর্কের পথে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বাধা হয়ে ‌দাঁড়িয়েছে। এই দেয়ালের সৃষ্টি করেছে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা ছিল ইতিহাস থেকে তাদের সেই ভূমিকাকে বাদ দিয়ে ইতিহাস লেখার উপায় নেই।

শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টি-জেপির ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করার নিন্দা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেদিন কারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল? নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল? বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল? কারা দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল? কারা পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে সংযুক্ত করে আইনে পরিণত করেছিল যাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যার খুনিদের বিচার না হয়। ইতিহাস তাদের ভুলে যাবে না।’

রাজনীতিবিদদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সম্পর্কের এই অলঙ্ঘনীয় দেয়াল সেখান থেকেই উঁচু হয়েছে। সেই দেয়াল উঁচু হতে হতে আরো উঁচু হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রাইম টার্গেট শেখ হাসিনা। তাঁকে প্রাইম টার্গেট করে যে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল সেই ইতিহাস বেশিদিন আগের নয়। কারা তখন ক্ষমতায়, কারা প্লানার, কারা মাস্টারমাইন্ড সবাই জানে। ইতিহাসের এই নির্মম অসত্য অস্বীকার করা উপায় নেই।’

রাজনীতির অলঙ্ঘনীয় দেয়া ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অলঙ্ঘনীয় দেয়াল কীভাবে ভাঙব? আমাদের চেষ্টার কমতি ছিল না। এত কিছুর পরও খালেদা জিয়ার সন্তানের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন সন্তানহারা মাকে সান্ত্বনা দিতে। ঘরের দরজা, বাইরের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার মুখের পর এই অলঙ্ঘনীয় দেয়াল আরও উঁচুতে উঠল। সেদিন যদি শেখ হাসিনা শোকাতুর মাকে সান্ত্বনা দিতে সেই গৃহে প্রবেশ করতে পারতেন, রাজনীতিতে কর্ম সম্পর্কের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতে পারত।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৪ সালের আগে এত কিছুর পরও শেখ হাসিনা গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বেগম জিয়াকে। তিনি ঘৃণাভরে গালাগাল করে যে ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন আপনার কি তা শোনেননি? টেলিফোনের আলাপে এত অশ্রাব্য ভাষা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি উচ্চারণ, কী করে এখানে কর্ম সম্পর্ক গড়ে উঠবে? কীভাবে আমরা বিএনপির সঙ্গে সহাবস্থান করব? কী করে সম্ভব? তারা ১৫ আগস্টের হত্যার নেপথ্যে ছিল, তারা একুশে আগস্ট হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিল। এই অবস্থা হলো বাস্তবতা।’

রাজনীতিবিদদের দৈন্যতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকে সামাজিক অনুষ্ঠানেও কে, কী মনে করে, কারো মৃত্যুর পর জানাজায় যাব কি না; এই দ্বিধাও আমাদের মাথায় কাজ করে। এসব বিষয় রাজনীতির জন্য শুভ নয়। এই কনফ্রেনটেশনাল পলিটিক্স গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। গণতন্ত্র এক চাকার বাইসাইকেল নয়, গণতন্ত্র দুই চাকার বাইসাইকেল। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলও গণতন্ত্রের বিকাশে অপরিহার্য শক্তি। বিরোধীদলকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে বিরোধী দলকেও শক্তিশালী করতে হবে।’

Advertisement