অনেকের মতে বিশ্বকাপের চেয়েও গুণে-মানে-জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। আর এবারের ১৬তম আসর ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। গ্রæপপর্ব থেকে শুরু করে ফাইনালের আগ পর্যন্ত আসরটির প্রতিটি ম্যাচ এতটাই জমজমাট ও উপভোগ্য হয়েছে যে গোটা দুনিয়া বুঁদ হয়ে ছিল। শিরোপা নির্ধারণী ফাইনাল ম্যাচেও উঠে এসেছে আসরের সেরা দুইদল ইতালি ও ইংল্যান্ড। লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে সেরা দু’টি দলের শিরোপা নির্ধারণী হাইভোল্টেজ মহারণ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায়।ইউরোর ইতিহাসে এর আগে মাত্র একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি। এবার তাই আজ্জুরিদের দ্বিতীয় শিরোপার মিশন। অন্যদিকে ইংল্যান্ড এবারই প্রথম নিজেদের ইউরো ইতিহাসে স্বপ্নের ফাইনালে উঠে এসেছে। ফুটবলের জনকদের তাই প্রথম ট্রফি জয়ের মিশন। সাড়া জাগানো আগুন ফাইনাল উপভোগ করতে গোটা ফুটবল দুনিয়ার চোখ এখন লন্ডনে। সবার মধ্যে আলোচনা তুঙ্গে, ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো নাকি ইতালি দ্বিতীয় শিরোপা জিতবে?
যদিও বড় কোন টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ইতালিকে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। অবশ্য আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ বাদ দিলে দল দু’টি খুব বেশি যে মুখোমুখি হয়েছে তা নয়। ইউরোতে আজকের ফাইনালের আগ পর্যন্তু দু’দলের দুই মুখোমুখিতে দুইবারই জয় পেয়েছে ইতালি। ইউক্রেনে ২০১২ আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শূটআউটে ইংল্যান্ডকে হারানোর আগে ১৯৮০ সালের ইউরোতেও ১-০ গোলে জয় পেয়েছিল বিখ্যাত নীল জার্সিধারীরা। এছাড়া ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের গ্রæপপর্বেও ইতালি ২-১ গোলে হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে।
সবমিলিয়ে দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও ইতালিয়ানদের আধিপত্য। এ পর্যন্ত ২৭ দেখায় ইংল্যান্ডের ৮ জয়ের বিপরীতে ইতালির জয় ১১ ম্যাচে। বাকি ৮ ম্যাচ ড্র হয়। তবে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবলে দু’দলের সবশেষ দুই সাক্ষাতই ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। ফাইনাল মহারণের আগে অবশ্য এসব পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবছে না কোন দলই। দু’টি দলই অসাধারণ ধারাবাহিকতা প্রদর্শন করে শিরোপার মঞ্চে এসেছে। বরং নিজেদের ঘরের মাঠে ম্যাচ হওয়ার সুবিধাটুকু নিতে চায় ইংলিশরা। দলটির কোচ গ্যারেথ সাউথগেট আগের পাঁচ ম্যাচের মতো ফাইনালেও দর্শকদের পাশে চেয়েছেন। এবার দশমবারের মতো বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলছে ইতালি। এর মধ্যে বিশ্বকাপে ছয়বার ও ইউরোতে এবারসহ চারবার। ছয়বার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে আজ্জুরিরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চারবার। কিন্তু আগের তিনবার ইউরোর ফাইনালে খেলে একমাত্র শিরোপাটি এসেছে সেই ১৯৬৮ সালে। এরপর দুটি ফাইনালে হেরেছে তারা। ২০০০ সালে রটারডামে ফ্রান্সের কাছে অতিরিক্ত সময়ের গোল্ডেন গোলে এবং ২০১২ সালে কিয়েভে স্পেনের কাছে ৪-০ গোলে হারতে হয়েছিল ইতালিকে। এবার সেই জ্বাটা মিটিয়ে ৫৩ বছর পর ইউরোতে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা দলটির। ইতালি কোচ রবার্র্টো ম্যানচিনি এ লক্ষ্য পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হওয়া দলটি এরপর থেকে ম্যানচিনির নেতৃত্বে টানা ৩৩ ম্যাচে অপরাজিত আছে।
ফাইনালে লক্ষ্যপূরণে বদ্ধপরিকর ইতালি কোচ রবার্টো ম্যানচিনি বলেন, আমরা জানি ফাইনাল ম্যাচটি মোটেই সহজ হবে না। এ দিনটির জন্যই গত তিন বছর খেলোয়াড়রা কঠোর পরিশ্রম করেছে। এ কৃতিত্ব সম্পূর্ণই তাদের। কারণ আমি জানতাম বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া একটি দলকে ফিরিয়ে আনাটা কতটা কঠিন। প্রায় সবাই মনে করেছিল আমরা কখনই এটা করতে পারব না। ইতালিয়ানদের সন্তুষ্ট করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। এখন শিরোপা জিতে সবাই শেষটা ভাল করার স্বপ্ন বুনছে।অন্যদিকে ২৫ বছর আগে ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ ইউরোর সেমিফাইনালে খেলা ইংল্যান্ড এবারই টুর্নামেন্টে প্রথমবার ফাইনালে এসেছে। শুধু তাই নয়, ইংলিশরা বৈশ্বিক কোন আসরে ৫৫ বছর পর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের টিকেট কেটেছে। এর আগে ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের অপেক্ষা শেষে বড় কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে এসেছে থ্রি লায়ন্সরা। ২০১৯ সালে ইংলিশরা নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা জিতেছে। এবার দেশটির ফুটবল দল ইউরোতে প্রথম ট্রফি জিততে মরিয়া।ফাইনাল নিয়ে ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট বলেন, আমরা যোগ্য দল হিসেবে ফাইনালে এসেছি। এখন সবাই শিরোপা জিততে মুখিয়ে আছে। কিন্তু কাজটা মোটেই সহজ হবে না। আমরা এমন একটি দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে যাচ্ছি যারা দীর্ঘদিন অপরাজিত আছে। ম্যাচটির আবহ আমরা বুঝতে পারছি। তবে আমরা ফাইনাল জিতে মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই।