লন্ডন : রানীগঞ্জ গণহত্যায় নিহত সকল শহীদ ও যুদ্ধাহত গাজীদের স্মরণে শহীদ-গাজী ফাউন্ডেশন, ইউকে‘র উদ্যোগে ৬ই সেপ্টেম্বর, রোববার “আমরা তোমাদের ভুলিনি“ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি, শহীদ সন্তান আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় ইউকের বিভিন্ন শহর, কানাডা ও বাংলাদেশ থেকে শহীদ ও যুদ্ধাহত পরিবারের সদস্য ও শুভাকাংখীরা অংশগ্রহণ করেন। সভায় বক্তারা ১৯৭১ সালের ১লা সেপ্টেম্বরে জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা দেন। এতে অনুষ্ঠানে এক বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গণহত্যার লোমহর্ষক ঘটনাবলী শুনে এবং নিজেদের পরিবারের শহীদ ও গাজীদের স্মৃতিচারণ করে শহীদ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনুষ্ঠানে বক্তারা শহীদ-গাজী রানীগঞ্জের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং একইসাথে রানীগঞ্জ সেতুকেও শহীদ-গাজীর স্মৃতি বিজড়িত নামে নামকরণের দাবী জানান। সেই সাথে গণহত্যায় শহীদ, যুদ্ধাহত ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের যারা এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের নিয়মিত রাষ্ট্রীয় সাহায্য সহযোগিতারও দাবী জানানো হয়।
উল্লেখ্য, আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ নয়মাস সময়কালে ভাটি অঞ্চলের অন্যতম নৌবন্দর রানীগঞ্জ বাজারে সংঘটিত হয় ইতিহাসের এক নিষ্ঠূরতম গণহত্যা। পাকহানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে শতাধিক নিরপরাধ মানুষ এবং জ্বালিয়ে দেয় বাজারের অনেক দোকানপাট। সেদিনের হত্যাকান্ডের শিকার হন রানীগঞ্জ বাজার কমিটির তৎকালীন সভাপতি শহীদ আকলু মিয়া, আব্দুল মজিদ ((দূর্ভাগ্যবশতঃ যার লাশ পাওয়া যায়নি), আনোয়ার হোসেন ও আকিল হোসেন (সহোদর), আলতা মিয়া, তছর উদ্দিন, সোনাহর আলী, মিছির আলী, আব্দাল মিয়া ও তাজু মিয়া সহ আরো অনেকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আকল মিয়া ও মজমিল মিয়া (গাজী হয়ে তারা এখন পরপারে)। এছাড়াও আহত হন বিনোদ রায়, ক্বারী এখলাছুর রহমান, তফজ্জুল হোসেন ও ওয়াহিদ আলী প্রমূখ (তাদের কেউই এখন আর বেঁচে নেই)।
আলোচনায় অংশ নেন শহীদ আকলু মিয়ার ভাই, বিশিষ্ট গীতিকার ডাঃ আলমাছ মিয়া, শহীদ আলতা মিয়ার ভাতিজা বিশিষ্ট সমাজসেবক লুৎফুর রহমান (অক্সফোর্ড), আউশকান্দি কলেজের প্রিন্সিপাল ও শহীদ সন্তান (আনোয়ার হোসেন ও আকিল হোসেনের পরিবার) লুৎফুর রহমান, শহীদ তাজু মিয়ার চাচাতো ভাই ও নজরুল ফাউন্ডেশন কানাডার সভাপতি নুরুল ইসলাম (টরেন্টো), অধ্যাপক মোহাম্মদ মাশুক মিয়া (টরেন্টো), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দবির উদ্দিন (ডারহাম), গুলিবিদ্ধ তোফাজ্জল হোসেনের ভাই রফু মিয়া (লন্ডন), শহীদ সন্তান (আকুল মিয়ার বড় ছেলে) হাজী আরজু মিয়া (রানীগঞ্জ), বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ইয়াওর উদ্দিন (লন্ডন), মির্জা আখলাকুর রহমান (ইউকে), ক্বারী এখলাছুর রহমানের বড় ছেলে আবুল কাশেম, শহীদ আব্দুল মজিদের নাতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্স অধ্যয়নরত সাইফুল ইসলাম বিপ্লব প্রমূখ। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন মরহুম আকল মিয়ার বড় মেয়ে রোজিনা বেগম।
এতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে, শহীদ-গাজী স্মরণে একটি স্মরণিকা প্রকাশ, ওয়েবসাইট ও ডকুমেন্টারী তৈরি এবং আগামীতে বড় পরিসরে দেশে একটি স্মরণ সভার আয়োজন করা হবে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদ-গাজীদের পরিচিতি তুলে ধরা যারা দেশের জন্য জীবন দিলেন এবং তাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হলাম।
ভার্চুয়াল মিটিংয়ে আরো অংশগ্রহণ করেন এডভোকেট আজমল হোসেন (সুনামগঞ্জ), আবুল আসাদ আফজাল (লন্ডন), শামীমা সুলতানা সুমি (সারি) ও আকরাম হোসেন (রানীগঞ্জ)।
উল্লেখ্য, এ বছর বৃহৎ আকারে লন্ডনে স্মরণ সভা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থাকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে তা‘ সম্ভব হয়নি। তবে আগামী বছর পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সবশেষে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোআ করা হয়।