রামেক হাসপাতালে আরো ১২ জনের মৃত্যু

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন ছিলেন করোনা পজেটিভ। বাকিরা মারা যান উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। আজ শুক্রবার সকালে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এ তথ্য জানিয়েছেন।তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন সময় তারা মারা যান। মৃতদের মধ্যে- রাজশাহীর ৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২, নাটোরের ২ ও নওগাঁর ৩ জন রয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের গত ১৮ দিনে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ১৮ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৮৩ জন। এর মধ্যে শনাক্ত হওয়ার পর মারা গেছেন ১০২ জন। বাকিরা মারা যান উপসর্গ নিয়ে। এদের নমুনা পরীক্ষার পর দুই-একটা ছাড়া সবারই করোনা পজেটিভ এসেছে।শামীম ইয়াজদানী আরও জানান, হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন। যা আগের দিন ছিল ৪৪ জন। আর সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫১ জন। যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৩১ জন। শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৪৯ জন।

শনাক্ত চল্লিশের ঘরেই
রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার চল্লিশের ঘরেই ওঠানামা করছে। বৃহস্পতিবার দুটি ল্যাবে রাজশাহীর ৩৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে।রাতে প্রকাশিত নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, আগের দিনের চেয়ে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। যা আগের দিন বুধবার ছিল ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং এর আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ৪৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ।শামীম ইয়াজদানী জানান, বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ল্যাবে ৫৬১ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ এসেছে ২২০ জনের। রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ জন ও নওগাঁর ৩০ নমুনা পরীক্ষায় নয়জনের পজেটিভ আসে। এ ছাড়াও বিদেশগামী দুই জনের নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ এসেছে।

দ্বিতীয় দফার লকডাউন শুরু
এদিকে, আজ শুক্রবার থেকে রাজশাহী নগরজুড়ে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফার ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। গত ১১ জুন এক সপ্তাহের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়। যা বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।তবে মৃত্যু ও শনাক্তের হার না কমায় চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হয়। গত বুধবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা বৈঠক করে সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আগামী ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত করে।

লকডাউনে সকাল থেকেই রাজশাহী নগরের রাস্তাঘাট ফাঁকা রয়েছে। দোকান-পাটও বন্ধ রয়েছে। সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে নগর ও জেলা পুলিশ ছাড়াও মাঠে কাজ চলছে জেলা প্রশাসনের চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। নগরজুড়ে টহল রয়েছে র‌্যাব সদস্যদেরও।রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, নগরীতে জরুরী সেবা পরিবহন ও ওষুধের দোকানপাট খোলা ছাড়া সব বন্ধ রয়েছে। নগরীর সবকয়টি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বিনা কারণে কাউকেই শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়াও নগরজুড়ে রয়েছে পুলিশী টহল। তারা লকডাউন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

করোনার চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক বলেন, শুধু প্রশাসন ও চিকিৎসকদের এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সম্ভাব নয়। এতে জনগণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একটু কষ্ট হলেও জনগনকে এই সাতদিন ঘরে থাকতে হবে। প্রয়োজনে বের হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তবেই আমার এই পরিস্থতি থেকে বের হতে পারবো।তিনি আরও বলেন, রাজশাহী শহরের প্রবেশ পথগুলো সব ‘লক’ করে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলার উপজেলা পর্যায় থেকে কেউ শহরে প্রবেশ করতে পারছে না। এছাড়াও তারা অন্য জেলাতেও যেতে পারছে না। পাশাপাশি বিধিনিষেধের বিষয়েও কড়াকড়ি করা হয়েছে। ফলে রাজশাহীর উপজেলা পর্যায়েও চলছে অঘোষিত লকডাউন বলেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

Advertisement