রাষ্ট্রপতির অসাধারণ সাক্ষাৎকার ও টনক নাড়ানো ‘ইত্যাদি’

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ইত্যাদির শুরুটা যথারীতি ছিল দুর্দান্ত মুন্সিয়ানায় ভরা। হাওড়ের নানান মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের ছোঁয়া দিয়েই কোটি কোটি হৃদয় কেড়ে নিলেন সবার প্রিয় বরেণ্য উপস্থাপক হানিফ সংকেত। একটি অনুষ্ঠান কিভাবে উত্সব হয়ে উঠতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইত্যাদির প্রতিটি পর্বে হাজার হাজার দর্শকের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি, অংশগ্রহণ আর স্থানীয় প্রশাসনের আগ্রহ, সহযোগিতা ও আন্তরিকরা দেখে। যার প্রমাণ আবারও মিলল গত পর্বে। যেখানে সর্বসাধারণের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় হাওরের মাঝখানে জনবিচ্ছিন্ন একটি অসমতল ছনের বন মুহূর্তেই হয়ে উঠল ইত্যাদির সুবিশাল মঞ্চ। তাইতো স্থানীয় সংসদ সদস্য অনেকটা আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘আজ হাওরে উত্সবের রব পড়েছে, এখানে ইত্যাদি হবে’।

হানিফ সংকেত তার মোহনীয় উপস্থাপনার শুরুটাই করলেন কাব্যময়তা দিয়ে ‘চির অপরূপ বাংলার রূপ দেখে যাও এসে বিশ্ব, জলে-সমতলে সাজানো অরূপ বিধাতার আঁকা দৃশ্য।’ কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে ধারণকৃত এ ইত্যাদি যেমন তুলে ধরেছে কিশোরগঞ্জের নানান কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি তেমনি বাদ যায়নি এ জেলার জীবন্ত ইতিহাস রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাদাসিধে জীবনযাপন ও মহানুভব জীবনভাবনা। এসবের পাশাপাশি সামপ্রতিক বিভিন্ন অসংগতিও উঠে এসেছে ইত্যাদির চিরাচরিত সুনিপুণ ভঙ্গিমায়।

জেলার পরিচিতি হিসাবে অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল সংশ্লিষ্ট জেলার একটি বিশেষ প্রতিবেদন। তবে এবারের প্রতিবেদনটি উপস্থাপনার নৈপূণ্যে হয়ে ওঠে অনন্য। কারণ, এই প্রতিবেদনেই উঠে আসে নিখাঁদ মাটি থেকেই উঠে আসা এক মাটির মানুষের কথা, যাঁর মননে ও চেতনায় সবসময় জাগ্রত থাকে মানুষের সমস্যা ও দুর্দশার কথা, থাকে তাদের জন্য ভালো কিছু করার নিরন্তর বাসনা। তিনি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বাংলাদেশের কোনো টিভি অনুষ্ঠানে এখনো পর্যন্ত রাষ্ট্রপতিকে দেখা যায়নি। তাঁর যেমন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তেমনি ইত্যাদিরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সবার কাছে। তাই বলা যায়, যথার্থ জায়গাতেই তিনি এসেছেন। তার সাক্ষাত্কারটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, অনুকরণীয় ও শিক্ষামূলক। তার সাথে যে জনগণের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, সেটি ফুটে ওঠার পাশাপাশি দেশের মানুষ তাদের রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে জেনেছে অজানা নানা তথ্য। তিনি সহজ-সরল একজন মানুষ, সাদা মনের মানুষ, প্রবল শিক্ষানুরাগী মানুষ। শুধু মিঠামইন উপজেলাতেই রয়েছে তার প্রতিষ্ঠিত শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হাইসড়ুল বিহীন মিঠামইনে ছাত্রাবস্থাতেই হাইস্কুল নির্মাণ, বিদ্যুিবহীন হাওড়ের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুত্সংযোগ প্রদান, সাইকেল চালানোর মতো রাস্তা না থাকা হাওড়ে সাবমারসিবল রোড তৈরি, সুযোগ পেলেই হাওড় এলাকার মানুষের উন্নয়নে প্রচেষ্টা-এমনই অনন্য কিছু মানবিক নিদর্শন তাকে সাতবারই মহান সংসদে যাবার পথ সুগম করে দেয়। সংসদ সদস্য থেকে সাফল্যের সর্বোচ্চ অবস্থানে গেলেও ব্যক্তিত্বে ও জনগণের সাথে সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটেনি একটুও। বলা যায়, তিনি শুধু একজন সফল রাজনীতিবিদ, সাংসদ, স্পিকার ও সফল রাষ্ট্রপতিই নন, মানুষ হিসেবেও তিনি শতভাগ সফল। তিনি মনে করেন, সততাই হবে রাজনীতিবিদদের মূল চালিকাশক্তি। তারা কখনোই মিথ্যা আশা দেবে না, মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করবে না। তাহলেই পলিটিকস শব্দটিকে কেউ আর নেতিবাচক রূপে ব্যবহার করবে না বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির এই সাক্ষাত্কারটি দেশের ভবিষ্যত্ জনপ্রতিনিধিদের বিবেকের দরজায় কিছুটা হলেও আঘাত হানলে দেশের জন্য মঙ্গল। তবে বিবেকের দরজা যে সবার সবসময় খোলা থাকে না, অর্থাত্ আমাদের চৈতন্য বা হুঁশ যে সবসময় থাকে না, সে-কারণেই নতুন জনসেবার এক তীর্যক চিত্র দেখানো হলো ‘টনক নড়ানোর টনিক’। সমপ্রতি রাজধানীতে বিশেষ অভিযানের পর সবার টনক নড়ার দিকেই সম্ভবত ইঙ্গিত করলো এ খণ্ড নাটিকাটি। ‘মানুষ আছে, টনক নাই’, ‘ঘটনা ঘটিবার পূর্বেই টনক নড়ুক’-এমন বার্তার পাশাপাশি গণমাধ্যমেরও টনক নড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করলো এবারের ইত্যাদি।

এবারের ইত্যাদিতে শোলাকিয়া মাঠ, দিল্লির আখড়া, এগারসিন্দুর দুর্গ ও ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ির দুর্গের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী, সত্যজিত্ রায়, জয়নুল আবেদিনসহ জেলার অন্যান্য কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের পরিচিতি। মানুষের স্মৃতি ও শ্রুতিতে যাদের কীর্তি এখনও অম্লান। আসলে এটাই সত্য যে, কীর্তিই মানুষ মনে রাখে যুগ যুগ ধরে। আমরা বিশ্বাস করি, জননন্দিত হানিফ সংকেতের ইত্যাদিও যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে মানুষ। শুধু তাই নয়, জেনে ভালো লাগলো ইত্যাদির তিনি নিয়মিত দর্শক। কখনও কর্মব্যস্ততার কারণে দেখতে না পারলে পুনঃপ্রচার দেখেন বলেও জানালেন। আর, এমন একটি অনুষ্ঠানকে দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে হাওরের মাছধরা জেলেদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয় করে তোলার অসামান্য কারিগর বরেণ্য হানিফ সংকেত যিনি বিগত চার দশকে ব্যক্তিসত্তাকে ছাড়িয়ে জনমানুষের মনিকোঠায় এক মূর্তিমান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। তার অনন্য কীর্তি ইত্যাদি, যা সমপ্রতি দীর্ঘ ৩০ বছর পেরিয়ে চার দশকে প্রবেশ করেছে। শুভ কামনা, ইত্যাদি। শুভ কামনা, হানিফ সংকেত।

Advertisement